Admission

বুয়েটে ভর্তি পরীক্ষার প্রস্তুতি- সঠিক গাইডলাইন

বুয়েটে ভর্তি পরীক্ষার প্রস্তুতি: উচ্চমাধ্যমিক  পরীক্ষায় পাস করার পর প্রত্যেক শিক্ষার্থীর স্বপ্ন থাকে দেশ সেরা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার। মেধাবীদের স্বপ্নের বিশ্ববিদ্যালয়ের  মধ্যে অন্যতম বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট)। বুয়েটে চান্স পেতে হলে শিক্ষার্থীরা অন্যরকম চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়। অন্যান্য পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের চেয়ে বুয়েটের ভর্তি পরীক্ষার ধরন সম্পূর্ণ আলাদা। ভর্তি পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সময় হচ্ছে এইচএসসি পরীক্ষার পরের কয়েকটি মাস। এ সময়ের সঠিক প্রস্তুতি আর দিকনির্দেশনাই পাল্টে দিতে পারে তোমার জীবন। তাই বুয়েট ভর্তি পরীক্ষায় ভালো ফলাফল করার পূর্বশর্ত হচ্ছে কঠোর অধ্যবসায় আর পরিশ্রম।

মনে রাখবে না বুঝে অযথা দিন-রাত প্রচুর পড়াশোনা করে লাভ নেই। টেকনিক খাটিয়ে পড়াশোনা করতে হবে। বুয়েট ভর্তি পরীক্ষায় অনেকের খারাপ করার প্রধান কারণ বেশি দুশ্চিন্তা বা আতংকে থাকা। অনেক শিক্ষার্থী দীর্ঘদিন যা পড়েছে তার বেশিরভাগই পরীক্ষার হলে গিয়ে ভুলে যায়। এছাড়া কঠিন বিষয়গুলো নিয়ে খুব বেশি সময় নষ্ট করে ফেলে। ফলে সহজ প্রশ্নগুলো সমাধান করে আসতে পারে না।

বুয়েট ভর্তি পরীক্ষার সময় বন্টন: 

বুয়েটে ভর্তি পরীক্ষার জন্য প্রতিটি রচনামূলক প্রশ্নের জন্য গড়ে প্রায় ৩ মিনিট সময় পাওয়া যায়। অতি অল্প সময়ের মধ্যে সব প্রশ্নের উত্তর করা প্রায় অসম্ভব। তাই যেসব প্রশ্নের সমাধান জানা আছে অথবা সমাধান করতে পারা যাবে বলে মনে হয় সেগুলোর আগে উত্তর করা উচিত।

বুয়েট ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নপদ্ধতি এবং মানবণ্টন সম্বন্ধে ধারণা : 

সিলেবাস এক হলেও উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা এবং ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নপত্রের ধরনে বেশ পার্থক্য আছে। প্রশ্নপদ্ধতি, মানবণ্টন, সময় ইত্যাদি সম্বন্ধে একটা স্বচ্ছ ধারণা রেখে প্রস্তুতি নেওয়া উচিত। বুয়েট ভর্তি পরীক্ষায় ১০০ ভাগ উত্তর করে আসা অনেকটা কঠিন। ৬০০ নম্বরের মধ্যে ৪০-৫০ নম্বরের উত্তর না করেও বুয়েটে চান্স পাওয়া সম্ভব। তাই সব প্রশ্নের উত্তর করে আসব- এই টার্গেট নিয়ে পরীক্ষা দিতে যাওয়া একধরনের বোকামি। বরং এই টার্গেট রাখা উচিত,আমি যা পারি তা সঠিকভাবে দিয়ে আসব।

ভর্তি পরীক্ষায় পদার্থবিজ্ঞান, রসায়ন ও গণিত এই তিনটি বিষয়ের ওপরই প্রশ্ন করা হয়। এর মধ্যে পদার্থ আর গণিতের প্রশ্নগুলো তুলনামূলক কঠিন হয়। এই বছর পদার্থবিজ্ঞান, রসায়ন ও গণিত প্রতিটি বিষয়ে ২০০ নম্বরের প্রশ্ন থাকবে। মনে রাখতে হবে কোনো ধরনের এমসিকিউ প্রশ্ন থাকবে না। বিগত বছরের বুয়েট এবং ইঞ্জিনিয়ারিং বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নগুলো অবশ্যই শুরু থেকে সমাধান করা উচিত। পুরোনো প্রশ্নগুলো দেখলে যেমন প্রশ্ন সম্পর্কে একটা ধারণা হবে, তেমনি প্রস্তুতির ফাঁকফোকরগুলোও ধরা পড়বে।

তোমরা যারা ২০২১-২২ সেশনে বুয়েট ভর্তি পরীক্ষা দেবে, তোমাদের কাছে সামনের দিনগুলো অনেক গুরুত্বপূর্ণ। এই কয়েকদিনে তোমার ভর্তিপ্রস্তুতি কেমন হবে তা জানার আগে চলো জেনে নেই গতবার কীভাবে প্রাথমিক বাছাই প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছিল বুয়েটে।

বুয়েট ভর্তি পরীক্ষা প্রাথমিক বাছাই:

২০২০-২১ সেশনের বুয়েট ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছিল দুই ধাপে। প্রথম ধাপে ছিল প্রিলিমিনারি বা প্রাথমিক বাছাই পরীক্ষা। এই অংশে উত্তীর্ণ হলেই কেবল পরবর্তী অংশ বা লিখিত পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সুযোগ মিলবে।

প্রিলিমিনারিতে উত্তীর্ণদের মধ্যে উচ্চতর গণিত,পদার্থবিজ্ঞান এবং রসায়নে সর্বমোট মার্কের ভিত্তিতে যারা প্রথম ৬০০০ জনের মধ্যে ছিল তাদের নিয়ে প্রকাশ করা হয়েছিল প্রাথমিক বাছাই তালিকা।

তোমরা ইতোমধ্যে জানো যে, এ বছরের বুয়েট ভর্তি পরীক্ষার প্রিলিমিনারি অংশে উচ্চতর গণিতে ৩৪, পদার্থবিজ্ঞানে ৩৩ ও রসায়নে ৩৩- মোট ১০০ নম্বরের বহুনির্বাচনী প্রশ্নে পরীক্ষা হয়েছিল। এছাড়াও লিখিত অংশে উচ্চতর গণিতে ১৪০, পদার্থবিজ্ঞানে ১৩০ এবং রসায়নে ১৩০- এই তিন বিষয়ে মোট ৪০০ মার্কের পরীক্ষা নেয়া হয়ে হয়েছে।

বহুনির্বাচনী অংশে প্রতিটি প্রশ্নের মান ১ এবং লিখিত অংশে প্রতিটি প্রশ্নের মান ১০। বহুনির্বাচনী অংশে সময় থাকে ১ ঘণ্টা আর লিখিত অংশে ২ ঘণ্টা। প্রিলিমিনারি অংশে নির্বাচিত হলেই তুমি লিখিত পরীক্ষায় অংশগ্রহণের যোগ্য বলে বিবেচিত হবে।

তবে প্রশ্নপদ্ধতির ক্ষেত্রে প্রতিবারই কিছু পরিবর্তন আসে। অর্থাৎ সুনির্দিষ্ট কোনো বিষয় থেকে প্রতিবার প্রশ্ন হয় না। তাই কমন বলে কোনো কিছু নেই। এই চিন্তা তোমাদের দূর করতে হবে।

তবে কিছু কৌশল অবলম্বন করলে তুমি এই ভর্তিযুদ্ধে হতে পারো একজন বিজয়ী বীর। এসো জেনে নেওয়া যাক বিষয়ভিত্তিক সেসব কৌশল।

বুয়েট ভর্তি পরীক্ষা পদার্থ বিজ্ঞানের প্রস্তুতি

পদার্থবিজ্ঞানের প্রথম পত্রে গতিবিদ্যাসহ প্রতিটি অধ্যায় গুরুত্বপূর্ণ। আর দ্বিতীয় পত্রে চুম্বক, তড়িৎশক্তি, আলো এসব অধ্যায় থেকে প্রায় প্রতিবছরই রচনামূলক প্রশ্ন থাকে। বইয়ের প্রতিটি অধ্যায়ের খুঁটিনাটি বিষয় মনোযোগ সহকারে এবং অবশ্যই বুঝে পড়তে হবে। থিওরিগুলো সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা থাকতে হবে। তাহলে সহজেই মনে থাকবে। পদার্থবিজ্ঞানে টেকনিক্যাল প্রশ্ন হয়ে থাকে। তাই সেভাবেই প্রস্তুতি নেয়া উচিৎ।

বুয়েট ভর্তি পরীক্ষা গণিতের প্রস্তুতি

গণিতের অনেক প্রশ্নই টেক্সট বই থেকে সরাসরি তুলে দেয়া হয়। আবার এমনও দেখা যায়, কিছু প্রশ্ন একটু ঘুরিয়ে দেয়া হয়। সুতরাং মূল বই ভালোভাবে পড়া থাকলে গণিতে খুব বেশি সমস্যা হওয়ার কথা নয়। কোন্ লেখকের বই পড়ব এটা নিয়ে অনেকেই দ্বিধায় ভোগে। ভালোভাবে বুঝে পড়লে যে কারো বই পড়লেই চলবে। বলবিদ্যার অঙ্কগুলো বুঝে করতে হবে পাশাপাশি ক্যালকুলাসের সূত্রগুলো মনে রাখতে হবে। গণিতে ভালো করার জন্য বেশি বেশি অনুশীলনের কোনো বিকল্প নেই। যে অঙ্কগুলো তুমি পারো, সেগুলোও বারবার চর্চা করতে হবে।

বুয়েট ভর্তি পরীক্ষা রসায়নের প্রস্তুতি

রসায়নের প্রশ্ন যদিও গণিত বা পদার্থবিজ্ঞানের মতো এতটা কঠিন হয় না। তবুও এ বিষয়টাতে অনেক সময় দিতে হবে, বিশেষ করে জৈব রসায়নে। রসায়ন যত বেশি চর্চা করবে, তত ভালো করা সম্ভব। বিক্রিয়াগুলো বারবার লিখে চর্চা করতে হবে এবং ভাল করে বুঝতে চেষ্টা করতে হবে। সবচেয়ে ভালো হয় সব বিক্রিয়া, সংকেত আলাদা খাতায় লিখে নোট করে রাখলে। তাহলে পরীক্ষার দু-এক দিন আগে সেগুলো একপলক চোখ বুলিয়ে নেয়া যাবে। বেশির ভাগ সময়ই দেখা যায় রসায়ন দ্বিতীয় পত্র থেকে রচনামূলক প্রশ্ন তেমন একটা আসে না। তবে দ্বিতীয় পত্রে প্রচুর বিক্রিয়া, পরীক্ষাগার প্রস্তুতি, শিল্পোৎপাদন, সংকেত, রূপান্তর পড়তে হবে। লক্ষ্য করে দেখা গেছে বেশির ভাগ প্রশ্নই করা হয় প্রথম পত্রের প্রথম দিককার অধ্যায়গুলো থেকে। তাই এসব অধ্যায় গুরুত্ব সহকারে দেখতে হবে।

বিগত বছরের প্রশ্নগুলো সমাধান করতে হবে। এতে যেমন পরীক্ষার প্রশ্ন সম্বন্ধে ধারণা তৈরি হয়, তেমনি আত্মবিশ্বাস বাড়ে। বিভিন্ন কোচিং সেন্টারে মডেল টেস্ট দেয়া যেতে পারে। এতে নিজেকে যাচাই করে নেয়া যায়। তবে কোচিং এ না গিয়েও নিজেকে যাচাই করা সম্ভব। সাজেশনভিত্তিক পড়াশোনা করা যাবে না। যারা মনে করছে, শেষ মুহূর্তে সাজেশন ধরে প্রস্তুতি নেবে, তাদের বুয়েটে ভর্তি পরীক্ষা দেয়াটাই বৃথা হবে। অনেকেই বিভিন্ন গাইড বইয়ের ওপর নির্ভর করে প্রস্তুতি নেয়। এটা আদতে কোনো সুফলই বয়ে আনবে বলে মনে হয় না। মূল বইয়ের কোনো বিকল্প নেই এ কথাটি অবশ্যই মাথায় রাখতে হবে।

বুয়েট ভর্তি পরীক্ষা আত্মবিশ্বাসী

সত্যি বলতে ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নগুলো এমন হয় যে জানা জিনিসগুলোও অনেক সময় গুলিয়ে যায়। তাই আত্মবিশ্বাস ধরে রেখে বারবার প্রশ্নটা পড়তে হবে, দেখবে উত্তরটা ঠিকই মাথায় আসবে। নিজের ওপর আস্থা রেখো কোনভাবেই পরীক্ষার হলে হতাশ হওয়া যাবে না। ঠা-া মাথায় চিন্তা ভাবনা করে প্রশ্নের উত্তর করতে হবে। প্রশ্ন যত কঠিনই হোক না কেন, কোনোমতেই ঘাবড়ানো যাবে না। সব কিছুতে নিজের ওপর আস্থা থাকা চাই। তাহলেই বুয়েটে চান্স পাওয়া সহজ।

কোন কিছু না বুঝলে তা ভবিষ্যতের জন্য রেখে দেবে না

আর একটি ব্যাপার, অনেক সময় তোমার জানার মাঝে প্রশ্ন আসবে কিন্তু দেখবে যে প্রশ্নের উত্তর দেখতে একটু আলাদা রকমের। ভয় নেই। আগে চেনা উত্তর বের করে সেটা থেকে তুমি চাওয়া উত্তর আনার চেষ্টা করবে। আর ক্যালকুলাসের উপর জোর দিবে। ক্যালকুলাসের অঙ্ক পারলে ভর্তি পরীক্ষায় তা অনেক সহায়ক হবে বলে আশা রাখি।

কিছু ব্যাপার যা তোমাকে মাথায় রাখতে হবে:

১. হাজার হাজার জনের মাঝ থেকে তোমাকে টিকে থাকতে হবে। সেই মানসিকতা তৈরি করতে হবে এখন থেকেই। কিন্তু তোমাকে ঘাবড়ে গেলে হবে না। তোমাকে নিজের জায়গা নিজের মেধা দিয়েই অর্জন করতে হবে।

২. সময় একদম অপচয় করা যাবে না।

৩. কে কত ভালোভাবে প্রস্তুতি নিচ্ছে সেটা একদমই খেয়াল রাখবে না। তুমি শুধু নিজের প্রস্তুতি ভালো করে নেবে।

৪. কোনো কিছু না বুঝলে তা ভবিষ্যতের জন্য রেখে দিবে না। অবশ্যই সময় থাকতে তা বুঝে নেবে।

৫. বুয়েটের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছো, তাই অন্য কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে কীভাবে চান্স পাব-এসব নিয়ে খুব বেশি মাথা ঘামাবে না। তোমার লক্ষ্য অটুট রাখবে সবসময়।

৬. পড়ার মাঝে হতাশা আসে, স্বাভাবিক। এই হতাশা কাটিয়ে উঠতে আবার পড়ালেখা ছেড়ে দিও না। একটু অবসর কাটিয়ে আবার পুরোদমে শুরু করো।

৭. তোমাকে চান্স পেতেই হবে-এই চিন্তা করে পরীক্ষা দিতে যাবে না। তোমাকে নিজের সেরাটা দিতে হবে, এটাই তোমার মূলমন্ত্র।

বুয়েট ভর্তি  পরীক্ষার  আগে অনেক পরিশ্রম করতে হয় তাই নিজেকে সুস্থ রাখা জরুরী। এজন্য নিয়মিত পুষ্টিকর খাবার ও ঘুমের দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে।যারা পরীক্ষার হলে কিছুটা নার্ভাস হয়ে যায় তারা হালকা মেডিটেশন করলে ভাল ফল পাবে।

ভর্তি Form পূরণ ও জমা দেওয়ার কাজ খুব যত্ন সহকারে করা উচিত। প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট যত্ন সহকারে রাখতে হবে।

Law Giant

A lawyer is a 'legal practitioner' who is an advocate, barrister, attorney, solicitor or legal adviser. Lawyers work primarily to solve the legal problems of individuals or organizations through the practical application of theoretical aspects of the law.

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button