অনলাইনে জমির মালিকানা বের করার সহজ নিয়ম,খতিয়ান বের করার নিয়ম
ঘনবসতি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ উল্লেখযোগ্য। কেননা এ দেশে জমির তুলনায় জনগণের পরিমানেই অনেক বেশি। তাই তো দিন দিন জমির মূল্য বৃদ্ধি পাচ্ছে। আর আজকে থানা কিংবা হাসপাতালের বেডে দেখা যাবে জমি নিয়ে ঝগড়া-ঝাটি হয়ে সেখানে মামলা কিংবা চিকিৎসকের দারস্থ হতে হয়। তাহলে এ থেকে তো বুঝতেই পারছেন জমি কতোটা মূল্যবান সম্পদ।
বর্তমানে আমরা জমি-জায়গার হিসাব সম্পর্কে ততোবেশি খেয়াল রাখি না। আমার ডিপেন্ড করি বাবা-মার উপর। আর যখন বাবা-মা উভয়েই মারা যায়,তখনেই জমি জায়াগা নিয়ে হাঙ্গামা শুরু হয়। তাই বলি ভাই এখনো সময় আছে। বর্তমানে তথ্য প্রযুক্তির ছোঁয়া কিন্তু আকাশচুম্বী। আপনি চাইলে ইউটিউবে কিংবা আমার মতো যারা এই বিষয়ে ওয়েবসাইট লিখে থাকে তাদের কাছ থেকে জেনে নিতে পারেন। আর যদি এসবও সম্ভব না হয় তাহলে নিকটস্থ ইউনিয়ন পরিষদ থেকে জেনে নিতে পারেন।
খতিয়ান বা পর্চা কি?
আইনের ভাষায় বলতে গেলে, সরকারি ভাবে জমি জরিপ করার সময় জরিপের বিভিন্ন ধাপ অতিক্রম করে চূড়ান্ত ভাবে বাংলাদেশ ফরম নং- ৫৪৬২ তে ভূমির মালিকানা বা দাগের বর্ণনা সহ যে নথি বা দলিল প্রকাশ করা হয় তাকে খতিয়ান বলে।
খতিয়ানের প্রকারভেদ
- বি এস খতিয়ান, (City Survey)
- সি এস খতিয়ান,(Cadastral Survey)
- আর এস খতিয়ান, (Revisional Survey)
- এবং এস এ খতিয়ান ,(Cadastral Survey)
যে বিষয় গুলো খতিয়ানে উল্লেখ থাকে?
জমির খতিয়ান বা পর্চাতে মালিকানা সহ আরো বিভিন্ন বিষয় উল্লেখ করা থাকে। যেমন –
- জমি দখলদারের নাম, ঠিকানা, পিতার নাম, মাতার নাম এবং প্রজা।
- দখলদারের জমির অবস্থা, পরিমান ও সীমানা।
- জমির মালিকের নাম, ঠিকানা এবং পিতার নাম।
- এস্টেটের মালিকের নাম, ঠিকানা এবং পিতার নাম।
- খতিয়ান তৈরি করার সময় খাজনার পরিমান এবং ২৮,২৯,৩০ বিধি অনুযায়ী নির্ধারিত খাজনা উল্লেখ থাকে।
- খাজনা বৃদ্ধি করণ থাকলে তার বিবারণ।
- ২৬ ধারা মোতাবেক নির্ধারিত খাজনা ও ন্যায়সঙ্গত খাজনা।
- নিজস্ব জমি হলে তার পূর্ণ বিবারণ।
- পথ চলার অধিকার এবং জমি সংক্রান্ত অন্যান্য অধিকার।
- ইজারাকৃত জমির ক্ষেত্রে জমি মালিকের অধিকার।
- খাজনা যে পদ্ধতিতে নির্ধারণ করা হয়েছে তার বিবরণ।
- এছাড়া দাগ নং, মৌজা নং, খতিয়ান নং, জেএল নং, এরিয়া নং, বাট্রা নং ইত্যাদি উল্লেখ থাক
- বিএস খতিয়ান / সিটি খতিয়ান: ১৯৯৮ সাল এবং ১৯৯৯ সাল হতে বর্তমানে চলমান জরিপকে বিএস খতিয়ান / সিটি খতিয়ান বলা হয়। এই খতিয়ান এখনো চলমান বহল রয়েছে।
- সিএস খতিয়ান: ১৯৪০ সালে ব্রিটিশ শাসনামলে সরকার জরিপের মাধ্যমে যে খতিয়ান প্রস্তুত করা হয় তাকে সিএস খতিয়ান বলা হয়।
- আরএস (RS) খতিয়ান: বাংলাদেশ সরকার ১৪৪ ধারা অনুযায়ী খতিয়ান প্রস্তুস করার উদ্যেগ নেয়। এই খতিয়ানকে বলা হয় আরএস খতিয়ান।
- এসএ খতিয়ান: ১৯৫০ সালে রাষ্ট্রীয় অধিকার গ্রহণ ও প্রজাস্বত্ব আইন ২৭ থেকে ৩১ ধারা অনুযায়ী ১৯৫৬ থেকে ১৯৬০ সালে যে খতিয়ান প্রস্তুত করা হয় তাকে এসএ খতিয়ান বলা হয়।
অনলাইনে খতিয়ান বের করার নিয়ম
১। প্রথমে ইন্টারনেট ব্রাউজিংয়ে https://www.eporcha.gov.bd/khatian ক্লিক করুন।
২. একটি ইন্টারফেস দেখতে পারবেন সেখানে আপনার নিজস্ব বিভাগ, নিজস্ব জেলা, নিজস্ব উপজেলা এবং পরিশেষে মৌজা বাছাই করুন। ( এসবের পূর্বে কিন্তু জমির ধরন অনুযায়ী বিএস,সিএস,বিআরএস, পেটি,এসএ,দিয়ারা এর মধ্যে যা হবে তা সিলেক্ট করুন)।
৩. এরপর আপনারা জমির খতিয়ান বের করার চারটি অপশন দিখতে পারবেন
(ক) খতিয়ান নং অনুযায়ী
(খ) দাগ নং অনুযায়ী
(গ) মালিকানা নাম অনুযায়ী
(ঘ) পিতা/স্বামীর নাম অনুযায়ী
উল্লেখ্যিত চারটি অপশনের মধ্যে যে অপশনটি আপনার আছে তা সিলেক্ট করুন। সিলেক্ট করার পর আর একটি বক্স দেখতে পারবেন। তার নিচে একটা ছোট বক্স আসবে তা পুরোন করুন। খতিয়ান নাম্বারটি বক্সে লিখুন,দাগ নাম্বারটি লিখুন,মালিকের নাম বক্সে লিখুন, জমির মালিকের পিতা/মাতা, স্বামী বা অভিভাবকের নাম বক্সে লিখুন।
৪। এরপর একটা অঙ্ক করুন,যোগ করতে বলা হবে তা যোগ করে যোগফল বক্সে লিখুন।
৫। এর পর সার্চ অপশনে ক্লিক করলে আপনার নিজস্ব খতিয়ানটি দেখতে পারবেন।
অনলাইনে কিভাবে খতিয়ান বা পর্চার কপি সংগ্রহ করবেন তার নিয়ম
খতিয়ান বা পর্চার কপি দুইভাবে সংগ্রহ করতে পারবেন।
- ডিজিটাল পদ্ধতিতে
- ম্যেনুয়াল পদ্ধতিতে।
আবার ডিজিটালে দুইভাবে পর্চা বা খতিয়ানের কপি দুইভাবে তুলতে পারবেন।
- ডাকযোগে খতিয়ানের সার্টিফাইড কপি।
- অনলাইনের মাধ্যমে কপি।
অনলাইনে মাধ্যমে খতিয়ান বা পর্চার কপি উত্তোলন করার ক্ষেত্রে জমির মালিকের নাম,পরিচয় পত্র নাম্বার, ফোন নাম্বার, তথ্য গুলো দিতে হবে। উল্লেখিত তথ্য গুলো দিয়ে মোবাইল ব্যাংকিং( বিকাশ, নগদ,রকেট) এর মাধ্যমে কিংবা অনলাইন ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে নির্ধারিত ফি আদায় করতে হবে। ফি পরিশোধ শেষে সরাসরি অনলাইনে কপি সংগ্রহ প্রিন্ট করে নিতে পারবোন।
জমির খতিয়ান বা পর্চা উঠার মেনুয়াল পদ্ধতি হচ্ছে খতিয়ান বা পর্চা নাম্বর দিয়ে সেটেলমেন্ট অফিসে যোগাযোগের মাধ্যমে খতিয়ান উত্তোলন করা। সেটেলমেন্ট অফিসে যোগাযোগ করে খতিয়ান উত্তোলন করার ক্ষেত্রে ১০০ টাকা ফি দিতে হবে। আর অনলাইনে প্রায় ৫০ টাকা ফি দিতে হবে।
অনলাইনে জমির মালিকানা যাচাই করার নিয়ম
ঘরে বসে অনলাইনের মাধ্যমে জমির মালিকানা যাচাই করতে পারবেন। এর জন্য আপনার প্রয়োজন হবে একটি স্মার্টফোন এবং সাথে ইন্টারনেট কানেকশন।
এবার আপনাকে ভূমি রেকার্ড ও জরিপ অধিদপ্তর এর সরকারি ওয়েবসাইটে প্রবেশ করতে হবে।
তারপর খতিয়ান তথ্য অনুসন্ধান এই অপশনে গিয়ে নিধারিত ফরম পূরণ করে আপনার খতিয়ান দেখে নিন।