আসল মধু/ খাঁটি মধু চেনার উপায় কী কী?
আসল মধু/ খাঁটি মধু চেনার উপায় কী কী? মধুর উপকারিতা কম বেশি সবারই জানা। তাই নানা প্রয়োজনে খাঁটি মধুর খোঁজ করেন অনেকে। তবে ভেজাল মধু খেলে উল্টো স্বাস্থ্যঝুকি বাড়তে পারে। গবেষকরা বলছেন, দেশে একেক ঋতুতে একেক ফুলের মধু হয়। মৌমাছি ও মধু গ্রুপের উদ্যোগে এক মতবিনিময় সভায় আসল মধু চিনতে কিছু কৌশলও জানিয়ে দিয়েছেন মধু গবেষকরা।
মধু তো প্রতিনিয়ত খেয়ে থাকেন, কিন্তু আসল মধু চিনেন কী?
নিজিস্ব সংগ্রহ, সাথে থেকে চাঁক ভাঙ্গা এবং অনেক বছরের মধু সংগ্রহের অভিজ্ঞতাই আমাদের কে খাঁটি মধু চেনতে সাহায্য করে। বর্তমান ইন্টারনেটের সহজলভ্যতাই এক দিকে মানুষ যেমন উপকৃত হচ্ছে অন্য দিকে তারা প্রতারণার স্বীকারও কম হচ্ছে না। গুগল আর ইউটিউবের যুগে সবাই সব কিছু জানে। আপনি যদি ইউটিউবে গিয়ে honey purity test লিখে সার্চ দেন তাহলে একটা ভিডিওতে
তিন তরিকায় মধুর পিউরিটি পরীক্ষা করা হয়েছেঃ
১। পানিতে ঢেলে দিলে যদি সাথে সাথে পানির তলায় জমে তাহলে আসল।
২। আগুন ধরিয়ে দিলে যদি পুড়ে যায় তাহলে আসল।
৩। বুড়া আঙুলের মাথায় দিলে যদি একটা একটা বিন্দুর মতো স্থির হয়ে থাকে তাহলে সেটা আসল।
এ ছাড়াও আরো কিছু সম্পূর্ণ বিপরীতধর্মী ‘বৈজ্ঞানিক’ পদ্ধতির কথা আমরা শুনতে পাইঃ
১। পিঁপড়া মধু খেলে সেটা আসল।
২। মধুতে পিপড়া না ধরলে সেটা আসল।
৩। ফ্রিজে রেখে দিলে জমে না গেলে সেটা আসল। ৪। শীতকালে জমে গেলে তবেই সেটা আসল।
খাঁটি মধু – ভেজাল মধু চেনার সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য মাধ্যম হচ্ছে ল্যাব টেস্ট। আর সেই ল্যাব টেস্টার নাম হলো কার্বন স্ট্যাবল আইসোটোপ রেশিও মাস স্পেকটোমেট্রি, বা ” D13C ” টেস্ট।
আসল মধু চেনার উপায়:
- পানিপূর্ণ গ্লাসে মধু ঢেলে দিলে সাথে সাথে গ্লাসের তলায় জমা হবে।
- একটু তুলা বা ম্যাচের কাঠিতে হালকা মধু লাগিয়ে আগুন ধরিয়ে দিলে যদি পুড়ে যায় তাহলে আসল।
- বুড়ো আঙুলের মাথায় মধু দিলে যদি একটা একটা শিশির বিন্দুর মতো স্থির হয়ে থাকে তাহলে সেটা আসল।
খাঁটি মধু বলতে আমরা কী বুঝি?
খাঁটি মধুর নিজস্ব কিছু বৈশিষ্ট্য আছে, যেগুলো জানা থাকা জরুরি।
যেমনঃ
- মধুর উপরের স্তরে হালকা ফেনা হওয়া।
- গ্যাস হওয়া।
- গাদ জমা।
- তলানীতে চিনির মত পদার্থ জমা (যা মুলত সুক্রোজ ও গ্লুকোজ)।
- মধু পাতলাও হতে পারে, যেমন বরই ফুলের মধুতে ময়েশ্চারের পরিমাণ বেশি থাকে এজন্য পাতলা হয়।
এ ধরণের প্রশ্নের সম্মুখিন প্রায় আমাদের হতে হয়। এই প্রশ্নে উ্ওর খুজতে গিয়ে সরোবর নামের একটি বিখ্যাত প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে দুইজন মানুষের সাথে যোগাযোগ করা হয়- ড. যাকারি হুয়াং এবং ড. লুস এলফেইন।
ওনারা উপরোল্লখিত সবগুলো পদ্ধতির কথা তুলে ধরে জানতে চায়- এভাবে কি খাঁটি মধু বোঝা যায়? তাঁদের দুজনেরই উত্তর ছিল, যায় না।
- কেন যায় না ?
কারণ, মধুর সান্দ্রতা নির্ভর করে মধুর আর্দ্রতা ওপরে। যে মধুতে পানি বেশি সেটা কম ঘন। যে মধুতে পানি কম সেটা অনেক ঘন। মরু এলাকার ফুলের মধু আর বাওড় এলাকার ফুলের মধুতে অনেক তফাত থাকে। সুন্দরবনের একদম খাঁটি মধু অনেক পাতলা হয়, আবার সরিষা ফুলের সাথে অনেক ভেজাল মেশানোর পরেও সেটাকে বেশ ঘন মনে হবে।
মধুতে সামান্য মোম মিশিয়ে দিলেই মধুটা সটান পানির তলায় চলে যাবে, জমে থাকবে। আগুন ধরিয়ে দিলে আগুন জ্বলবে। মজার ব্যাপার হচ্ছে, এই মোমটা যদি মধুতে না মিশিয়ে চিনির শিরাতে মিশিয়ে দেন, একই ফল পাবেন। আমরা অফিসে চিনির শিরা ঘন করে বানিয়ে পরীক্ষা করে দেখিয়েছি চিনির শিরা বেশি ঘন হলে সোজা তলে চলে যায়, দ্রবীভূত হয় না।
সত্যি কথা বলতে কী, খাঁটি মধু বানানোর চাপে অনেক ভালো মধু উৎপাদকরাও মধুকে প্রক্রিয়াজাত করতে বাধ্য হন। প্রক্রিয়াজাত মানে মৌমাছির তৈরি মধুকে উত্তপ্ত করে পানির পরিমাণ কমিয়ে ফেলা। দুঃখজনক হলেও, এ কাজটা করতে গিয়ে মধুর বেশকিছু পুষ্টিমান হারিয়ে যেতে পারে। এজন্য আমরা চেষ্টা করছি মানুষের মাঝে একটা সচেতনতাবোধ তৈরি করতে যে মৌমাছিদের থেকে সরাসরি পাওয়া প্রাকৃতিক মধুই সবচেয়ে ভালো, হোক সেটার দাম বেশি, হোক সেটা একটু কম ঘন।
শুরুর প্রশ্নে ফিরে যাই- ঘরে বসে খাঁটি মধু চিনব কীভাবে? কোনো উপায় নেই। শুধু আমাদের কাছে না, পৃথিবীর বড় বড় বিজ্ঞানীদের কাছেও নেই। অনলাইন হাতুড়েরা যেসব দেখাচ্ছে সেগুলো বাকওয়াজ ছাড়া অন্য কিছু নয়।
খাঁটি মধু পাবেন কীভাবে তার উত্তর দিতে পারিঃ
১। আপনি গ্রামের দিকে থাকলে বা গ্রামের সাথে ভালো যোগাযোগ থাকলে, নিজের মধু নিজেই দাঁড়িয়ে থেকে সংগ্রহ করুন।
২। এটা সম্ভব না হলে, কোনো বিশ্বস্ত প্রতিষ্ঠান থেকে সংগ্রহ করতে পারেন। কারো বিশ্বস্ততায় সন্দেহ হলে তার সাথে মধুর খামার পর্যন্ত যেতে পারেন