ই-পাসপোর্ট তৈরীর নিয়মাবলী 2023
পাসপোর্ট শব্দটির সাথে সবাই পরিচিত এটি একটি ফারাসি শব্দ। আর পরিচিত হবে না কেন? আপনি নিশ্চয়ই জানেন এক দেশ থেকে অন্য দেশে গমন করতে পাসপোর্টের প্রয়োজন। যাতায়ত হোক বিমানে,ট্রেনে,কিংবা জাহাজে তার জন্য প্রয়োজন পাসপোর্টের।পাসপোর্ট এমন একটি জিনিস যা অন্য দেশ ভ্রমণের কাজে ব্যবহার করা হয়। বর্তমানে বেশিরভাগ মানুষের কাছে পাসপোর্ট রয়েছে কারণ ভ্রমন, ব্যাবসায়িক বা চিকিৎসার জন্য অন্য দেশে পাড়ি জমাতে পাসপোর্ট এর বিকল্প নেই। সাধারণ পাসপোর্ট এর তুলনায় ই-পাসপোর্ট বর্তমানে তুমুল সাড়া ফেলেছে।
ই পাসপোর্ট কি?
ই-পাসপোর্ট হলো ইলেকট্রনিক পাসপোর্ট যেখানে একটি ইলেকট্রনিক চিপ লাগানো থাকবে যার মাধ্যমে পাসপোর্টধারীর সকল ধরনের তথ্য সংগ্রহ করা যাবে। পাসপোর্টের একাধিক কাগজ গুচ্ছ বিশৃংখলা সৃষ্টি করে বলেই নতুন ই-পাসপোর্ট সূচনা ঘটেছে পুরো বিশ্বে। ই পাসপোর্ট এর ভিতরেই থাকছে পাসপোর্টধারীর দশটি আঙ্গুলের ছাপ এবং চোখের স্ক্যান। এছাড়াও এই ই-পাসপোর্টে পাসপোর্টধারীর তিন রকমের ছবি ও সংরক্ষন করা হবে যাতে তার পরিচয়ে কোন ব্যাঘাত না ঘটে।
ই-পাসপোর্ট আবেদন ফি
- ৫ বছরের ৪৮ পৃষ্ঠার ই পাসপোর্ট এর জন্য সাধারণ ফি সাড়ে তিন হাজার টাকা আপনাকে গুনতে হবে। (১৫ দিন)
- জরুরি ই-পাসপোর্ট এর জন্য আপনাকে দিতে হবে সাড়ে পাঁচ হাজার টাকা। (৭ দিন)
- আর আপনার যদি অতি জরুরিতে ই পাসপোর্ট এর দরকার পড়ে তাহলে ফি হিসেবে আপনাকে গুনতে হবে সাড়ে সাত হাজার টাকা। (২ দিন)
- ১০ বছরের জন্য আপনাকে ৪৮ পৃষ্ঠার পাসপোর্ট এর জন্য সাধারণ ফি পাঁচ হাজার টাকা দিতে হবে। (১৫ দিন)
- জরুরি ই-পাসপোর্ট এর জন্য আপনাকে গুনতে হবে সাত হাজার টাকা। (৭ দিন)
- আর আপনার যদি অতি জরুরিতে ই পাসপোর্ট এর দরকার পড়ে তাহলে ই-পাসপোর্টের ফি হবে নয় হাজার টাকা।(২ দিন)
- ৫ বছরের ৬৪ পৃষ্ঠার ই পাসপোর্টের জন্য সাধারণ ফি সাড়ে পাঁচ হাজার টাকা। (১৫ দিন)
- জরুরি ই-পাসপোর্টের জন্য আপনাকে গুনতে হবে সাড়ে সাত হাজার টাকা। (৭ দিন)
- অতি জরুরিতে আপনার যদি ই পাসপোর্ট এর প্রযোজন পড়ে তখন আপনার ফি হবে সাড়ে ১০ হাজার টাকা।(২ দিন)
- ১০ বছরের জন্য ৬৪ পৃষ্ঠার ই-পাসপোর্টের জন্য সাধারণ ফি সাত হাজার টাকা। ( ১৫ দিন)
- ই-পাসপোর্ট জরুরি ভাবে আপনি যদি তৈড়ি করতে চান তাহলে আপনাকে ফি দিতে হবে নয় হাজার টাকা ।(৭ দিন)
- অতি জরুরি ই-পাসপোর্ট আপনার প্রয়োজন হলে আপনাকে গুনতে হবে ১২ হাজার টাকা। (২দিন)
- এই ই-পাসপোর্ট ফি এর সাথে যথারিতি ১৫% ভ্যাট যুক্ত হবে।
ই পাসপোর্ট করার নিয়ম 2023
ই পাসপোর্ট এর আবেদন করার জন্য প্রথমে তিনটি জিনিস আবশ্যক।
- ই পাসপোর্ট আবেদন ফর্ম।
- জন্ম নিবন্ধন পত্র।
- জাতীয় পরিচয়পত্র (NID)।
ই পাসপোর্ট এর ফরম ডাউনলোড করে জাতীয় পরিচয় পত্র এবং জন্ম নিবন্ধন পত্র অনুযায়ী ফিলাপ করে নির্দিষ্ট স্থানে জমা দিতে হবে।
আপনি যদি প্রাপ্তবয়স্ক অর্থাৎ 18 বছরের নিচে হন তাহলে আপনাকে আপনার ই পাসপোর্ট ফরমে আপনার বাবার অথবা মায়ের ভোটার আইডি কার্ড নং সংযুক্ত করতে হবে।
ই পাসপোর্ট এর পেমেন্ট দেওয়ার জন্য আপনাকে এখন আর ব্যাংকে দৌড়াতে হবে না আপনি চাইলে আপনার নগদ বিকাশ এবং রকেট থেকেও নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ ই পাসপোর্ট এর জন্য পেমেন্ট দিতে পারবেন।
অনলাইনে আবেদন করার প্রক্রিয়া
প্রথমেই ইন্টারনেট ব্রাউজিংয়ে www.passport.gov.bd লিখে সার্চ করুন। এ পর্যায়ে আপনি সেখানে একটি ইন্টারফেস দেখতে পারবেন। হোম পেইজের উপরের দিকে অনলাইন এপ্লিকেশনে Click করুন। সেখানে কিছু নীতিমালা দেখতে পারবেন এবং কন্টিনিউ এনারোলমেন্টে Click করুন।
স্টেপ ১ঃApplying: সেখানে ক্যান্টি সিলেক্ট করুন। কোন ক্যান্টি থেকে আবেদন করতেছেন।
স্টেপ ২ঃ অ্যাপ্লাইং ধরনঃ আপনি যদি নতুন করে অ্যাপ্লাই করেন তাহলে অ্যাপ্লিকেশন লিখতে হবে। আর রিনিউ করতে হলে অন্য লিংকে যেতে হবে।
স্টেপ ৩ঃপাসপোর্টের ধরনঃ আপনি কোন ধরনের পাসপোর্ট করতে চাচ্ছেন তা লিখতে হবে। সাধারণ, ডিপ্লোমেটিক,অফিশিয়াল যে বিষয়ে পাসপোর্ট করেন না কেন? তার সার্পেটিং কাগজপত্র জমা দিতে হবে।
স্টেপ ৪ঃ ডেলিভারীর ধরনঃ আপনি যদি রেগুলার ডেলিভারি নেন তাহলে রেগুলার লিখুন। আর যদি জরুরি হয় তাহলে একপ্রেস লিখুন।
আপনার ব্যক্তিগত তথ্য গুলো নির্ভুল ভাবে পূরণ করুন। আর সবগুলো তথ্য ফিলাপ করা হলে সেখানে সেইভ অপশন আসবে আপনি তা সেইভ করে নিন। আপনার নিবন্ধনটি সম্পুর্ন হলে সেখানে দেখাবে এবং আপনার ইমেইলে একটি মেসেজ আসবে সেখানে নাম্বার ও পাসওয়ার্ড উল্লেখ থাকবে।
ই-পাসপোর্টের সুবিধা
ই-পাসপোর্টের সবচেয়ে বড় সুবিধা হচ্ছে এর মাধ্যমে ই-গেট ব্যবহার করে খুব দ্রুত ও সহজে ভ্রমণকারীরা যাতায়াত করতে পারবেন। ফলে বিভিন্ন বিমানবন্দরে ভিসা চেকিংয়ের জন্য লাইনে দাঁড়াতে হবে না। এর মাধ্যমেই ইমিগ্রেশন দ্রুত হয়ে যাবে। ই-গেটের নির্দিষ্ট স্থানে পাসপোর্ট রেখে দাঁড়ালে ক্যামেরা ছবি তুলে নেবে। থাকবে ফিঙ্গারপ্রিন্ট যাচাইয়ের ব্যবস্থাও। সব ঠিক থাকলে তিনি ইমিগ্রেশন পেরিয়ে যেতে পারবেন। কোনো গরমিল থাকলে জ্বলে উঠবে লালবাতি। কারও বিরুদ্ধে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা থাকলে, সেটিও জানা যাবে সঙ্গে সঙ্গে।
- অনলাইনে অ্যাপ্লিকেশন ব্যবস্থা রয়েছে।
- তৎক্ষনাৎ মনিটারিং ব্যাবস্থা রয়েছে।
- অনুমোদন পদ্ধতি ইলেকট্রনিক্স ব্যবস্থা রয়েছে।
ই-পাসপোর্ট সম্পর্কে উল্লেখযোগ্য তথ্য জেনে রাখুন:
ই-পাসপোর্টের আবেদনপত্র জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) বা জন্মনিবন্ধন সনদ (বিআরসি) অনুযায়ী পূরণ করতে হবে। অপ্রাপ্তবয়স্ক (১৮ বছরের কম) আবেদনকারী, যার জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) নেই, তার পিতা-মাতার জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) নম্বর অবশ্যই উল্লেখ করতে হবে। ই-পাসপোর্টের আবেদনপত্র অনলাইনে অথবা পিডিএফ ফরমেট ডাউনলোড করে পূরণ করা যাবে। এতে কোনো ছবি এবং কোনো ধরনের কাগজপত্র সত্যায়নের প্রয়োজন নেই।
প্রাপ্তবয়স্কদের ক্ষেত্রে জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) এবং অপ্রাপ্তবয়স্কদের ক্ষেত্রে জন্মনিবন্ধন সনদপত্রসহ বাবা-মায়ের এনআইডির কপি বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। আবেদনপত্র গ্রহণের সময় হাতের ১০ আঙুলের ছাপ, ছবি ও চোখের আইরিশ ফিচার নেওয়া হবে। ই-পাসপোর্টের ক্ষেত্রেও পুলিশ ভেরিফিকেশন প্রয়োজন হবে।
অতি জরুরি ক্ষেত্রে ই-পাসপোর্ট করার জন্য প্রি-পুলিশ ভেরিফিকেশন নিজ উদ্যোগে করে নিয়ে যেতে হবে। প্রচলিত ব্যবস্থার মতো ই-পাসপোর্টের ক্ষেত্রে ভিসার বিষয়টি একই থাকবে। ভিসা কর্তৃপক্ষ বা দূতাবাসগুলো এই পিকেডি ব্যবহার করে আবেদনকারীর তথ্য যাচাই করে নিতে পারবে। এরপর বইয়ের পাতায় ভিসা স্টিকার, সিল দিতে পারবে বা বাতিল করে দিতে পারবে। ই-পাসপোর্টের পাশাপাশি এমআরপিও চালু থাকবে। তবে নতুন করে কাউকে এমআরপি দেওয়া হবে না। পর্যায়ক্রমে সব এমআরপি তুলে নেওয়া হবে। আবেদন করার বিস্তারিত নিয়মাবলি অধিদপ্তরের ওয়েবসাইটে দেওয়া হয়েছে।