পবিত্র রমজান মাস উপলক্ষে ইসলামিক ফাউন্ডেশন কতৃক প্রকাশিত সেহরী ও ইফতারের সময়সূচী অনুসুরন করে বরাবরের মত এবারও আলোরমেলা আপনাদের জন্যে একটি চমৎকার রোজার ক্যালেন্ডার তৈরী করেছে। ক্যালেন্ডারটি আপনি নিচের এ্যাটাচমেন্ট (সংযুক্তি) থেকে পিডিএফ বা ছবি আকারে ডাউনলোড করে প্রিন্ট করে বা আপনার স্মার্ট ফোনে রেখে অনুসরন করতে পারেন এবং শেয়ার করতে পারেন আপনার পরিচিত জনদেরকেও।
এছাড়াও আপনার নিশ্চই ইতিমধ্যে খেয়াল করেছেন যে ধর্মপ্রাণ মুসলমান ভাই-বোনদের সুবিধার্থে আলোরমেলার ডান পাশে সাইডবারের (মোবাইল স্ক্রিনে নীচে) প্রতিদিন পাঁচওয়াক্ত নামাজের সময়সূচী প্রকাশিত হয়ে থাকে। ঢাকার সময় অনুযায়ী প্রকাশিত এই সূচীর সাথে আপনার এলাকার সময়ের সমন্বয় করে ব্যবহার করতে পারেন।
আপনাকে অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে যে চাঁদ দেখা সাপেক্ষে রমজান মাস শুরু হবে এবং শেষ হবে। সতর্কতার জন্যে সূর্যাস্তের তিন মিনিট পর ইফতার ও মাগরিবের আযানের সময় নির্ধারন করা হয়েছে এবং একই ভাবে সতর্কতার জন্যে সুবহি সাদিকের তিন মিনিট আগে সেহরির শেষ সময় নির্ধারন করা হয়েছে আর ফজরের আযান দিতে হবে সুবহি সাদিকের তিন মিনিট পর অর্থাৎ সেহরির শেষ সময়ে ছয় মিনিট পর ফজরের আযান দিতে হবে।
ঢাকা জেলার বাইরে বসবাসরত রোজাদারগন অবশ্যই সেখানকার সেহরী ও ইফতারের স্থানীয় সময় অনুযায়ী সেহরী ও ইফতার গ্রহন করবেন। এই সেহরি-ইফতার সূচীতে দেয়া আছে কোন জেলার লোকজন ঢাকা জেলার কত মিনিট আগে বা পরে সেহরি-ইফতার পানাহার করবেন।
পবিত্র মাহে রমযান ১৪৪৩ হিজরি, ১৪২৮/১৪২৪ বঙ্গাব্দ, ২০২২ খ্রিস্টাব্দ ১৪৪৩ হিজরি ২০২২ খ্রিস্টাব্দ।
জেনে নিন আজকের সেহেরির শেষ সময় এবং ইফতারের শেষ সময়। (ঢাকা জেলার জন্য প্রযােজ্য)
১৪৪৩ হিজরি রমযান | ২০২২ খ্রিস্টাব্দ এপ্রিল/মে | বার | সেহরির শেষ সময় | ফজরের ওয়াক্ত শুরু | ইফতারের সময় |
০১ | ০৩ এপ্রিল | রবি | ৪-২৭ মিঃ | ৪-৩৩ মিঃ | ৬-১৯ মিঃ |
০২ | ০৪ এপ্রিল | সােম | ৪-২৬ মিঃ | ৪-৩২ মিঃ | ৬-১৯ মিঃ |
০৩ | ০৫ এপ্রিল | মঙ্গল | ৪-২৪ মিঃ | ৪-৩০ মিঃ | ৬-২০ মিঃ |
০৪ | ০৬ এপ্রিল | বুধ | ৪-২৪ মিঃ | ৪-৩০ মিঃ | ৬-২০ মিঃ |
০৫ | ০৭ এপ্রিল | বৃহস্পতি | ৪-২৩ মিঃ | ৪-২৯ মিঃ | ৬-২১ মিঃ |
০৬ | ০৮ এপ্রিল | শুক্র | ৪-২২ মিঃ | ৪-২৮ মিঃ | ৬-২১ মিঃ |
০৭ | ০৯ এপ্রিল | শনি | ৪-২১ মিঃ | ৪-২৭ মিঃ | ৬-২১ মিঃ |
০৮ | ১০ এপ্রিল | রবি | ৪–২০ মিঃ | ৪-২৬ মিঃ | ৬-২২ মিঃ |
০৯ | ১১ এপ্রিল | সােম | ৪-১৯ মিঃ | ৪-২৫ মিঃ | ৬–২২ মিঃ |
১০ | ১২ এপ্রিল | মঙ্গল | ৪-১৮ মিঃ | ৪–২৪ মিঃ | ৬-২৩ মিঃ |
১১ | ১৩ এপ্রিল | বুধ | ৪-১৭ মিঃ | ৪-২৩ মিঃ | ৬-২৩ মিঃ |
১২ | ১৪ এপ্রিল | বৃহস্পতি | ৪–১৫ মিঃ | ৪-২১ মিঃ | ৬-২৩ মিঃ |
১৩ | ১৫ এপ্রিল | শুক্র | ৪-১৪ মিঃ | ৪-২০ মিঃ | ৬-২৪ মিঃ |
১৪ | ১৬ এপ্রিল | শনি | ৪-১৩ মিঃ | ৪-১৯ মিঃ | ৬–২৪ মিঃ |
১৫ | ১৭ এপ্রিল | রবি | ৪-১২ মিঃ | ৪-১৮ মিঃ | ৬-২৪ মিঃ |
১৬ | ১৮ এপ্রিল | সােম | ৪-১১ মিঃ | ৪-১৭ মিঃ | ৬-২৫ মিঃ |
১৭ | ১৯ এপ্রিল | মঙ্গল | ৪-১০ মিঃ | ৪-১৬ মিঃ | ৬-২৫ মিঃ |
১৮ | ২০ এপ্রিল | বুধ | ৪-০৯ মিঃ | ৪-১৫ মিঃ | ৬-২৬ মিঃ |
১৯ | ২১ এপ্রিল | বৃহস্পতি | ৪-০৮ মিঃ | ৪-১৪ মিঃ | ৬-২৬ মিঃ |
২০ | ২২ এপ্রিল | শুক্র | ৪-০৭ মিঃ | ৪–১৩ মিঃ | ৬-২৭ মিঃ |
২১ | ২৩ এপ্রিল | শনি | ৪-০৬ মিঃ | ৪-১২ মিঃ | ৬-২৭ মিঃ |
২২ | ২৪ এপ্রিল | রবি | ৪-০৫ মিঃ | ৪-১১ মিঃ | ৬-২৮ মিঃ |
২৩ | ২৫ এপ্রিল | সােম | ৪-০৫ মিঃ | ৪-১১ মিঃ | ৬-২৮ মিঃ |
২৪ | ২৬ এপ্রিল | মঙ্গল | ৪-০৪ মিঃ | ৪-১০ মিঃ | ৬-২৯ মিঃ |
২৫ | ২৭ এপ্রিল | বুধ | ৪–০৩ মিঃ | ৪-০৯ মিঃ | ৬-২৯ মিঃ |
২৬ | ২৮ এপ্রিল | বৃহস্পতি | ৪-০২ মিঃ | ৪-০৮ মিঃ | ৬-২৯ মিঃ |
২৭ | ২৯ এপ্রিল | শুক্র | ৪-০১ মিঃ | ৪-০৭ মিঃ | ৬–৩০ মিঃ |
২৮ | ৩০ এপ্রিল | শনি | ৪-০০ মিঃ | ৪-০৬ মিঃ | ৬-৩০ মিঃ |
২৯ | ১ মে | রবি | ৩-৫৯ মিঃ | ৪-০৫ মিঃ | ৬-৩১ মিঃ |
৩০ | ২ মে | সােম | ৩-৫৮ মিঃ | ৪-০৪ মিঃ | ৬-৩১ মিঃ |
বিঃ দ্রঃ অনুগ্রহ করে সচেতন থাকুন, উপরে উল্লেখিত সময়সূচি থেকে ১ মিনিট আগে রোজার নিয়ত করবেন এবং ইফতারের সময় ১ মিনিট পরে ইফতার করবেন ।
পবিত্র রমজান মাসে রোজা পালনের নির্দেশ দিয়েছেন স্বয়ং আল্লাহ তাআলা। প্রাপ্ত বয়স্ক মুসলমান নারী-পুরুষের জন্য রোজা রাখা ফরজ। রোজা রাখার মাধ্যমে মানুষ আল্লাহর নৈকট্য ও তাকওয়া লাভে ধন্য হয়।
রোজা পালন উপলেক্ষ আল্লাহ তাআলা বলেন,
‘হে ঈমানদারগণ! তোমাদের ওপর সিয়াম বা রোজা ফরজ করা হয়েছে; যেভাবে তোমাদের পূর্ববর্তীদের ওপর ফরজ করা হয়েছিল; যাতে তোমরা তাকওয়া (আত্মশুদ্ধি) অর্জনে করতে পার। (সুরা বাকারা : আয়াত ১৮৩)
রমজানের রোজা পালনের জন্য সাহরি করা আবশ্যক। হাদিসে পাকে প্রিয়নবি সাহরি গ্রহণের তাগিদ দিয়েছেন। আবার যথাসময়ে ইফতার গ্রহণেরও তাগিদ প্রদান করেছেন।
হজরত আমর ইবনুল আস রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
আমাদের রোজা এবং আহলে কিতাব তথা ইয়াহুদি ও খ্রিস্টানদের রোজার মধ্যে পার্থক্য হলো সাহরি খাওয়া। (অর্থাৎ মুসলিমরা সাহরি খায় আর ইয়াহুদি ও খ্রিস্টানরা সাহরি খায় না)।’ (মুসলিম, নাসাঈ)
রোজা পালনে সাহরি ও ইফতারের যেমন গুরুত্ব রয়েছে তেমনি রোজার নিয়ত ও ইফতারের দোয়ার রয়েছে যথেষ্ট গুরুত্ব। সাহরি খাওয়ার পর রোজা নিয়ত করা জরুরি।
রমজান মাসের সাহরী ও ইফতারের সময়সূচি ২০২২
বছর ঘুরে অফুরন্ত রহমত নিয়ে ফিরে এলো মাগফিরাত ও নাজাতের মাস রমজান। রমজান আসে আমাদের অন্তরজগৎ প্রস্তুত করতে। যেন সেখানে খোদাভীতি জায়গা করে নিতে পারে। প্রাপ্ত বয়স্ক মুসলমান নারী-পুরুষের জন্য রোজা রাখা ফরজ। রোজা রাখার মাধ্যমে মানুষ আল্লাহর নৈকট্য ও তাকওয়া লাভে ধন্য হয়।
রোজা পালন উপলেক্ষ আল্লাহ তাআলা বলেন,
হে মুমিন সকল! তোমাদের উপর রমজানের রোজা ফরজ করা হয়েছে, যেমনিভাবে তোমাদের পূর্ববর্তীদের উপরও ফরজ করা হয়েছিল। যাতে তোমরা তাকওয়া অর্জন করতে পার। (সূরা বাকারা-১৮৩)
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি ঈমানের সঙ্গে সওয়াবের আশায় রমজানের রোজা রাখে, (অন্য বর্ণনায়) ঈমানের সঙ্গে সওয়াবের আশায় তারাবির নামাজ পড়ে, তার অতীতের সকল গুনাহ মাফ করে দেয়া হয়। (বুখারি শরিফ: হাদিস নং ১৯০১)
রোজা রাখার নিয়ত
আরবি – نَوَيْتُ اَنْ اُصُوْمَ غَدًا مِّنْ شَهْرِ رَمْضَانَ الْمُبَارَكِ فَرْضَا لَكَ يَا اللهُ فَتَقَبَّل مِنِّى اِنَّكَ اَنْتَ السَّمِيْعُ الْعَلِيْم
বাংলা উচ্চারণঃ নাওয়াইতু আন আছুমা গাদাম মিন শাহরি রমাদ্বানাল মুবারকি ফারদ্বল্লাকা ইয়া আল্লাহু ফাতাক্বব্বাল মিন্নী ইন্নাকা আনতাস সামীউল আলীম।
বাংলা অর্থঃ হে আল্লাহ! আগামীকাল পবিত্র রমযান মাসে তোমার পক্ষ হতে ফরজ করা রোজা রাখার নিয়ত করলাম, অতএব তুমি আমার পক্ষ হতে তা কবুল কর। নিশ্চয়ই তুমি সর্বশ্রোতা ও সর্বজ্ঞানী।
ইফতারের দোয়া
আরবি – اَللَّهُمَّ لَكَ صُمْتُ وَ عَلَى رِزْقِكَ وَ اَفْطَرْتُ
বাংলা উচ্চারণঃ আল্লাহুম্মা সুমতু লাকা ওয়া তাওয়াক্কালতু আ’লা রিযকিকা ওয়া আফতারতু বিরাহমাতিকা ইয়া আরহামার রাহিমীন।
বাংলা অর্থঃ হে আল্লাহ! আমি তোমারই সন্তুষ্টির জন্য রোজা রেখেছি এবং তোমারই দেয়া রিযিক্বের মাধ্যমে ইফতার করছি।
ইফতারের কিছুক্ষণ পূর্বে ‘ইয়া ওয়াসিয়াল মাগফিরাতি, ইগফিরলী’ এ দোয়াটি বেশী বেশী পড়তে হবে। অর্থঃ হে মহান ক্ষমা দানকারী! আমাকে ক্ষমা করুন। (শু‘আবুল ঈমান: ৩/৪০৭)
রোজার নিয়ত
نَوَيْتُ اَنْ اُصُوْمَ غَدًا مِّنْ شَهْرِ رَمْضَانَ الْمُبَارَكِ فَرْضَا لَكَ يَا اللهُ فَتَقَبَّل مِنِّى اِنَّكَ اَنْتَ السَّمِيْعُ الْعَلِيْم
আরবি নিয়ত : নাওয়াইতু আন আছুম্মা গাদাম মিন শাহরি রমাজানাল মুবারাকি ফারদাল্লাকা, ইয়া আল্লাহু ফাতাকাব্বাল মিন্নি ইন্নিকা আনতাস সামিউল আলিম।
বাংলায় নিয়ত : হে আল্লাহ! আমি আগামীকাল পবিত্র রমজানের তোমার পক্ষ থেকে নির্ধারিত ফরজ রোজা রাখার ইচ্ছা পোষণ (নিয়্যত) করলাম। অতএব তুমি আমার পক্ষ থেকে (আমার রোযা তথা পানাহার থেকে বিরত থাকাকে) কবুল কর, নিশ্চয়ই তুমি সর্বশ্রোতা ও সর্বজ্ঞানী।
ইফতারের আগ মুহূর্তে বেশি বেশি ইসতেগফার পড়া
اَسْتَغْفِرُ اللهَ الْعَظِيْم – اَلَّذِىْ لَا اِلَهَ اِلَّا هُوَ اَلْحَيُّ الْقَيُّوْمُ وَ اَتُوْبُ اِلَيْهِ لَا حَوْلَ وَ لَا قُوَّةَ اِلَّا بِاللَّهِ الْعَلِىِّ الْعَظِيْم
আসতাগফিরুল্লাহাল আজিম, আল্লাজি লা ইলাহা ইল্লাহু আল-হাইয়্যুল ক্বাইয়্যুম, ওয়া আতুবু ইলাইহি লা হাওলা ওয়ালা কুয়্যাতা ইল্লা বিল্লাহিল আলিয়্যিল আজিম।
ইফতারের সময় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে দোয়া পড়ে ইফতার করা
اَللَّهُمَّ لَكَ صُمْتُ وَ عَلَى رِزْقِكَ وَ اَفْطَرْتُ بِرَحْمَتِكَ يَا اَرْحَمَ الرَّاحِيْمِيْن
উচ্চারণ : আল্লাহুম্মা লাকা ছুমতু ওয়া আলা রিযক্বিকা ওয়া আফতারতু বিরাহমাতিকা ইয়া আরহামার রাহিমিন।
অর্থ : হে আল্লাহ! আমি তোমারই সন্তুষ্টির জন্য রোজা রেখেছি এবং তোমারই দেয়া রিযিক্বের মাধ্যমে ইফতার করছি।
ইফতারের পর আল্লাহর শোকরিয়া আদায় করে দোয়া পড়া
হজরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন ইফতার করতেন তখন বলতেন-
ذَهَبَ الظَّمَاءُ وَابْتَلَتِ الْعُرُوْقُ وَ ثَبَتَ الْأَجْرُ اِنْ شَاءَ اللهُ
উচ্চারণ : ‘জাহাবাজ জামাউ; ওয়াবতালাতিল উ’রুকু; ওয়া ছাবাতাল আঝরূ ইনশাআল্লাহ।’
অর্থ : ‘ (ইফতারের মাধ্যমে) পিপাসা দূর হলো, শিরা-উপসিরা সিক্ত হলো এবং যদি আল্লাহ চান সাওয়াবও স্থির হলো ‘ (আবু দাউদ, মিশকাত)
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে সাহরির পর নিয়ত করা, ইফতারের আগে তাওবা-ইসতেগফার করা, ইফতারের সময় দোয়া পড়া এবং ইফতারের পর শোকরিয়া আদায় করে দোয়া পড়ার তাওফিক দান করুন। আমিন।