বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষার প্রস্তুতি এবং ভর্তি সংক্রান্ত সকল তথ্য
বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষার প্রস্তুতি এবং ভর্তি সংক্রান্ত সকল তথ্য। আমাদের দেশের পরিপ্রেক্ষিতে বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষা একজন শিক্ষার্থীর জীবনে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি অধ্যায়। এই লেখায় থাকছে ভর্তি পরীক্ষায় যারা অংশগ্রহণ করবে তাদের জন্য কিছু গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ যা তাদের এই দুর্গম পথ পাড়ি দিতে অনেকটা সহায়তা করবে। বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষা প্রস্তুতি আমাদের সবারই স্বপ্ন থাকে দেশের নামকরা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় গুলোতে পড়াশোনা করার।
বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তির গুরুত্বপূর্ণ কথা
অনেকেই ছোঁটে কোচিং, প্রাইভেট এর পিছনে কিন্তু তাদের সবাই কি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় গুলোতে পড়াশোনা করার সুযোগ পায় ?না। সবাই পায় না। কারন তারা সঠিক কোনো গাইড লাইন অনুসরন করতে পারে না। ভর্তি পরীক্ষার জন্য কোচিং বা প্রাইভেটে না ছুঁটে, সময় নষ্ট না করে ঘরে বসেই বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষার প্রস্তুতি নেয়া সম্ভব। প্রথমেই বলব নিজের ফোকাস ঠিক রাখতে। কারন ফোকাস ঠিক না রাখলে অনেক পড়াশোনা করেও চান্স পাওয়া প্রায় অসম্ভব। তোমার লক্ষ্য যদি হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় তাহলে মন স্থির করো এবং পড়াশোনা চালিয়ে যাও।
বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তির লক্ষ্য নির্ধারণ
কার্যকরী অনেকগুলো উপায়ের একটি হলো রুটিন তৈরি করে পড়াশুনা চালিয়ে যাওয়া। তুমি যদি বুঝতে না পার কোথায় থেকে শুরু করবে রুটিন তৈরি করা, কীভাবে বিষয় গুলো সাজাবে ? তাহলে বলব তোমার বন্ধুদের থেকে বিভিন্ন কোচিং বা প্রাইভেট এ যে রুটিন তাদের দিয়েছে তা সংগ্রহ করতে। রুটিন গুলো থেকে ধারণা নিয়ে তোমার সুবিধা অনুযায়ী প্রত্যেক দিনের রুটিন গুলো তৈরি করে ফেলো। তারপর একে একে বিষয় গুলো তোমার সূবিধা অনুযায়ী সাজাও এবং সেই রুটিনটা মানার চেষ্টা কর। যখন তোমার চারপাশে সবাইকে কোনো না কোনো লক্ষ্য নিয়ে ছুটতে দেখবে তখন নিজের মনে প্রশ্ন জাগবে ‘আমার স্বপ্নটা কী? আমার গন্তব্য কোথায়?’ তাই তোমার ভালো লাগার ক্ষেত্রটা আবিষ্কার করো। মেডিকেল, ইঞ্জিনিয়ারিং, আইন, অর্থনীতি কিংবা গণিত, পদার্থবিজ্ঞান- কোন ক্ষেত্রে তোমার আগ্রহ রয়েছে তা ভেবে দেখো। সেই পথেই অগ্রসর হও। সেই বিষয়ে পড়ার সুযোগ অর্জনের জন্য প্রস্তুতি নাও।
বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষার প্রস্তুতি এবং ভর্তি সংক্রান্ত সকল তথ্য
তবে যে কথাটি না বললেই নয় তা হলো, তোমার স্বপ্ন যেন কখনোই কোনো একটা ভার্সিটিকেন্দ্রিক না হয়ে বরং বিষয়কেন্দ্রিক হয়। যেমন, এমন অনেকেই আছে যার কেবল বুয়েটে পড়ারই স্বপ্ন অথচ সে কখনোই ইঞ্জিনিয়ার হবার স্বপ্ন দেখেনি। আসলে এটা স্বপ্ন নয়, এটা হচ্ছে একটা মোহ। সেইসব শিক্ষার্থী পরে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়াশোনার চাপ সামলাতে না পেরে অনেক ক্ষেত্রে বিপথগামী হয়। সুতরাং, কোনো নির্দিষ্ট ভার্সিটিতে পড়ার ইচ্ছে তোমার থাকতেই পারে তবে সেটার আগে বিবেচনায় প্রাধান্য দিতে হবে “বিষয়”-কে।
ভর্তি পরীক্ষার প্রস্তুতি
উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা শেষ করে একজন শিক্ষার্থী ভর্তি পরীক্ষার আগে প্রায় 120 দিন সময় হাতে পায়। এই 120 দিন বা চার মাস তার জন্য এক অতি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এই সময়টাতে প্রচুর পড়াশোনা করলে তবেই আসবে কাঙ্ক্ষিত অর্জন। পড়ালেখা বাদে অন্যসব সময়সাপেক্ষ কাজ-কর্ম বর্জন করতে হবে। অনেকেই প্রশ্ন করে ‘ভর্তি পরীক্ষার আগে দৈনিক কত ঘণ্টা পড়ব?’ এর কোনো নির্দিষ্ট উত্তর নেই। এটি একটি আপেক্ষিক ব্যাপার। যতক্ষণ না তুমি আত্মবিশ্বাস নিয়ে বলতে পারবে যে তুমি চান্স পাওয়ার মতো যথেষ্ট প্রস্তুতি নিয়েছো, ততক্ষণ পর্যন্ত পড়তেই হবে। ভর্তি পরীক্ষার জন্য কোনো অধ্যায় বাদ দিয়ে পড়ার সুযোগ নেই। সব অধ্যায়ই পড়তে হবে। তবে বিগত বছরের প্রশ্ন দেখে অধ্যায়ের গুরুত্ব জানা যাবে। তবে এই ব্যাপারটি ভার্সিটিভিত্তিক। অর্থাৎ একটি ভার্সিটির ভর্তি প্রশ্নে যে অধ্যায় থেকে সচরাচর প্রশ্ন কম আসে তা কেবল ঐ ভার্সিটির ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। তাই প্রতিটি ভার্সিটির ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্ন আলাদাভাবে পর্যবেক্ষণ করলে বুঝা যাবে ঐ ভার্সিটির জন্য কোন অধ্যায় বা টপিক গুরুত্বপূর্ণ। পড়ার পাশাপাশি প্রচুর প্রশ্ন সমাধান অনুশীলন করতে হবে। এর দ্বারা পড়া আরও ঝালাই হবে। প্রশ্নের সাথে পরিচিতি হবে এবং প্রশ্ন দেখার পর উত্তর মাথায় আনার দক্ষতা অর্জিত হবে।
অনেকের মধ্যে দেখা যায়, অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাস; আবার অনেক শিক্ষার্থীই পর্যাপ্ত আত্মবিশ্বাসের অভাবে ভালো করতে পারেন না ভর্তি পরীক্ষায়। ভর্তি পরীক্ষায় অনেক প্রতিযোগী দেখে অনেকেই ভয় পেয়ে যান, আত্মবিশ্বাস হারিয়ে ফেলেন। এই আত্মবিশ্বাসহীনতা তাদের হতাশার দিকে ঠেলে দেয়। আবার মাত্রাতিরিক্ত আত্মবিশ্বাসও ক্ষতিকর। ভালো ফলের জন্য দরকার শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত প্রচেষ্টার সঙ্কল্প।
ভর্তি আবেদন সম্পর্কে কিছু কথা
প্রথমত, চেষ্টা করবে যত বেশি সংখ্যক ভার্সিটিতে ভর্তি পরীক্ষা দেয়া সম্ভব তা দেবে। অনেকেই মনে মনে নির্বাচন করে ওমুক ভার্সিটি আমার ভালো লাগে না, ওমুক ভার্সিটি দূরে, এতোদূর যেতে আলসেমি লাগে, পরীক্ষাই দেবো না ইত্যাদি। এসমস্ত চিন্তা মাথা থেকে এখনই ঝেড়ে ফেলো। কারণ ভর্তি পরীক্ষার চিত্রটা তোমার কল্পনার বাইরে। তুমি যত ভালো ছাত্র/ছাত্রীই হও না কেন, অন্তত এখন কোনো ভার্সিটিকেই ছোট করে দেখবে না। কারণ ভর্তি পরীক্ষায় একটা বিরাট ভূমিকা রাখে নিয়তি বা ভাগ্য। এই ভাগ্যের কাছে হেরে গিয়ে অনেক মেধাবী তাদের প্রাপ্য ভার্সিটিতে চান্স পায় না। তাই, অন্তত ভর্তি আবেদন করার ক্ষেত্রে বাছবিচার না করে সবখানে পরীক্ষা দাও। সবার জন্য অনেক অনেক শুভ কামনা।