ধর্ম

ইসলামে উসূল বা মূলনীতি কী?

ইসলামে উসূল বা মূলনীতি কী?
আমরা হাদীসে যা পাব ; তাই আমল করবো। তাই না?
উপরের কথাগুলো মানুষ দু’কারণে বলে –
১. হাদিস সম্পর্কে অজ্ঞতা
২. উসূল সম্পর্কে অজ্ঞতা
অথচ, নিয়ম হচ্ছে – একটা হাদিস জানার পর সেটার উপর আমল করতে হলে সেই হাদিসটার অবস্থা ও আমলের মূলনীতি জানতে হবে৷ নতুবা, সহজে বিভ্রান্তিতে পতিত হবেন৷
উসূল কি জিনিস?
আর এটার প্রয়োজনীয়তা কি?
বা এটার ব্যবহারবিধী কি ?
ইত্যাদি সব বিষয়ের জবাব সংক্ষিপ্ত একটা হানাফী মাজহাবের উসূল বা মূলনীতি দিয়ে বুঝিয়ে দিচ্ছি। আল্লাহ তাওফীক দাতা !
ধরুন,
হানাফী মাজহাবের একটা উসূল হচ্ছে –
কোন রাবী যদি একটা হাদীস বর্ণনা করেন এবং হাদিসটা সহীহ৷ কিন্তু, রাবী এর বিপরীত আমল করে থাকেন। তাহলে হানাফী মাজহাবের মূলনীতি হল – বর্ণনাকারীর হাদীস ধর্তব্য না ; বরং উনার আমল’ই ধর্তব্য৷ এ ক্ষেত্রে বর্ণিত হাদিস’টা মানসুখ ( রহিত) আর আমলটাকে নাসিখ ( রহিতকারী) হিসেবে বিবেচ্য হবে৷
উদাহরণস্বরূপ –
১. আবু হুরায়রা রাঃ বর্ণনা করেন যে, রাসূল সাঃ বলেছেন – যদি কুকুর তোমাদের কারো পাত্র থেকে পান করে নেয়, তাহলে সে যেন তা সাত বার ধৌত করে নেয়। ( বুখারী;মুসলিম)
এই হাদিস’টার দিকে লক্ষ্য করুন! স্পষ্ট বলা হচ্ছে যে, কোন পাত্রে কুকুর পান করে থাকলে, সেটাকে সাত বার ধৌত করতে হবে৷ আর হাদিসটা বর্ণনা করেছেন আবু হুরায়রা রাজিয়াল্লাহু আনহু!
কিন্তু, অপর আরেকটা সহীহ হাদিসে পাওয়া যায় যে, আবু হুরায়রা রাঃ নিজেই এমতাবস্থায় সাত বার ধৌত না করে মাত্র তিন বার ধৌত করেছেন!
এবার দেখা গেলো –
আবু হুরায়রা রাঃ এর বর্ণিত হাদিস এবং তার আমলের মধ্যে পরস্পর বিরোধ রয়েছে৷অর্থাৎ, তাঁর বর্ণিত হাদিসে সাত বারের কথা আর আমলে পাওয়া যায় তিন বারের কথা৷ এমতাবস্থায়, উম্মাহের করণীয় কী ? করণীয় হলো, একটা মূলনীতি দাঁড় করা বা উসূল এর দিকে ধাবিত হওয়া !
এই জায়গায় এসে ইমামে আজম আবু হানীফা রাঃ ফতোয়া দেন যে, রাবীর আমলের উপর হুকুম সাব্যস্ত হবে। কারণ, বর্ণিত হাদিস’টি মানসুখ হতে পারে৷ নতুবা, জালিল কদর সাহাবী কখনো রাসূল সাঃ এর কথার বিপরীতে আমল করতেন না৷
এবার,
আপনাদেরকে শেষ একটা কথা বলি –
ধরুন,
আপনি একটা হাদিসের গ্রন্থ ও একটা হানাফী মাজহাবের ফতোয়া গ্রন্থ পড়তাছেন।
১. হাদিস গ্রন্থে পড়লেন –
রাসূল সাঃ বলেছেন – কুকুরে পান করলে পাত্র সাতবার ধৌত করতে হবে৷
২. ফতোয়া গ্রন্থে পড়লেন –
ইমামে আজম বলেছেন – কুকুরে পান করলে তিনবার ধৌত করলে চলে৷
আপনি না জানেন উসূল, না জানেন হাদিসের হুকুম – তবে উভয়টা পড়ে বললেন –
সর্বনাশ ! আবু হানীফা এসব কি করলেন ? রাসূল বলেছেন, সাত বার আর তিনি ফতোয়া দিলেন তিন বার !!
তখন হয়তো আরো বলবেন, আশ্চর্য ! আবু হানীফা তো কোন হাদিস’ই জানেন না। শুধু কিয়াস করেন। নিশ্চিত, আবু হানিফার কাছে এই হাদিস পৌঁছে নাই!
প্রিয় ভাই আমার,
মাজহাবের বিষয়টা ঠিক এই জায়গায় এসে ঠেকে৷ আপনি হয়তো আক্ষরিক জ্ঞান দিয়ে দেখতাছেন – আবু হানীফা রাঃ বুখারী /মুসলিম কিংবা অন্যান্য সহীহ হাদিস থাকা সত্ত্বেও নেননি৷ কিন্তু, পিছনের কাহিনি হয়তো জানেননি। তাই তো, মন চাহিদা আজেবাজে কথা বলছেন! আল্লাহ সবাইকে সঠিক বুঝ দান করুক!
-আব্দুল কারীম আল-মাদানী
আইন ও বিচার বিভাগ, মদীনা বিশ্ববিদ্যালয়

Law Giant

A lawyer is a 'legal practitioner' who is an advocate, barrister, attorney, solicitor or legal adviser. Lawyers work primarily to solve the legal problems of individuals or organizations through the practical application of theoretical aspects of the law.

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button