Information

আত্মীয়-স্বজন পরিচিতি- আত্মীয়তার প্রকারভেদ

আত্মীয়-স্বজন পরিচিতি
১। পিতা → জনক, বাবা।
২। মা → জননী, মাতা, আম্মা।
৩। বিমাতা → বাবার অন্য স্ত্রী, সৎমা।
৪। বিমাতৃজ → সৎভাই।
৫। বিমাতৃজা → সৎবোন।
৬। ধাইমা → অন্যের বাচ্চাকে নিজের দুধ পান করান যে নারী।
৭। ভাই → একই পিতামাতার পুত্র, ভ্রাতা, সহোদর; বৈমাত্রেয় বা বৈপিত্রেয় পুত্র, ভ্রাতৃস্থানীয় ব্যক্তি।
৮। বোন→ ভগিনী, সহোদরা।
৯। বৈমাত্রেয় ভাই → একই পিতার কিন্তু ভিন্ন মাতার পুত্র (ভাই)/একই মাতার কিন্তু ভিন্ন পিতার পুত্র (ভাই)।
১০। বৈমাত্রেয় বোন → একই পিতার কিন্তু ভিন্ন মাতার কন্যা (বোন)/একই মাতার কিন্তু ভিন্ন পিতার কন্যা (বোন)।
১১। ভাইবেরাদার→ আত্মীয়পরিজন, জ্ঞাতি, বন্ধুবান্ধব।
১২। পো/পুত্র/ছেলে → ছেলে সন্তান।
১৩। কন্যা→ মেয়ে সন্তান।
১৪। ঝি→ কন্যা, পরিচারিকা।
১৫। মাসি/খালা → মায়ের বোন।
১৬। মেসো/মেসোমশায়/খালু → খালার স্বামী।
১৭। মাসতুতো ভাই/বোন → খালাতো ভাই/বোন।
১৮। পিসি/ফুফু/ফুপু→ বাবার বোন, পিতৃষ্বসা।
১৯। পিসে/ফুপা/ফুফা/পিসা → বাবার বোনের/ফুপুর স্বামী।
২০। পিসতুতো ভাই/বোন → ফুফাতো ভাই/বোন।
২১। কাকা/খুড়া/খুড়ো/চাচা/পিতৃব্য → বাবার ছোটো ভাই।
২২। কাকি/চাচি/খুড়ি/পিতৃব্যপত্নী → কাকার স্ত্রী।
২৩। চাচাতো/খুড়তুতো/কাকাতো ভাই/বোন → চাচার সন্তান।
২৪। জ্যাঠা/বড়ো আব্বা/বড়ো চাচা → বাবার বড়ো ভাই।
২৫। জেঠি/জেঠিমা → জ্যাঠার স্ত্রী।
২৬। জেঠতুতো ভাই/বোন→ জ্যাঠার সন্তান।
২৭। ভাশুর/বড়ো ঠাকুর→ স্বামীর বড়ো ভাই বা তৎস্থানীয় ব্যক্তি।
২৮। ভাশুরঝি → ভাশুরের মেয়ে।
২৯। ভাশুরপো → ভাশুরের ছেলে।
৩০। জা → ভাশুর/দেবরের স্ত্রী।
৩১। ননদ/ননদি/ননদিনি/নন্দা/ঠাকুরঝি → স্বামীর ছোটো বোন।
৩২। ননাস → স্বামীর বড়ো বোন।
৩৩। নন্দাই/ননদাই/ঠাকুর-জামাই → ননদের স্বামী।
৩৪। দেবর/দেওর/ঠাকুরপো → স্বামীর ছোটো ভাই
৩৫। জেঠাস, জেওয়াস → স্ত্রীর বড়ো বোন, আপা (আঞ্চলিক)।
৩৬। শালি/শ্যালিকা → স্ত্রীর ছোটো বোন (বড়ো বোনকে ‘আপা’ বলে সাধারণত)।
৩৭। শালা → স্ত্রীর ছোটো ভাই।
৩৮। সম্বন্ধী → স্ত্রীর বড়ো ভাই।
৩৯। বউদি/ভাবি→ বড়ো ভাইয়ের পত্নী, স্ত্রীর বড়ো ভাইয়ের পত্নী।
৪০। তালই → ভাই/বোনের শ্বশুর।
৪১। মাউই→ ভাই/বোনের শাশুড়ি।
৪২। বেয়াই → পুত্রের/কন্যার শ্বশুর, মাউই ও তালই-এর ছেলে।
৪৩। বেয়ান → পুত্রের/কন্যার শ্বাশুড়ি, মাউই ও তালই-এর মেয়ে।
তাছাড়া বেয়াই ও বেয়ান ছাড়াও তাদের স্ত্রী-স্বামীকেও বেয়াই/বেয়ান বলে।
তালাতো ভাই/বোন → বোনের ননদ, ননাস, দেবর, ভাবি কিংবা ভাইয়ের শালা, সম্বন্ধী, শালি-জেঠাস আপনার তালাতো ভাই/বোন; মাউই ও তালই-এর ছেলে-মেয়ে।
৪৪। ভায়রা/ভায়রা ভাই → শালী/জেঠাসের স্বামী, বউয়ের বোনের স্বামী।
৪৫। শালাজ/শালাবউ → শালার বউ।
৪৬। নাতি/পৌত্র/দৌহিত্র → পুত্রের বা পুত্রস্থানীয়ের পুত্র, পৌত্র; কন্যা বা কন্যা স্থানীয়ার পুত্র, দৌহিত্র।
৪৭। নাতিন/নাতনি/পৌত্রী/পুতি/দৌহিত্রী → পুত্রের/কন্যার মেয়ে।
৪৮। নাতজামাই → নাতনির স্বামী।
৪৯। পড়িনাতি → নাতি/নাতনির ছেলে, প্রপৌত্র।
৫০। পড়িনাতিন → নাতি/নাতনির মেয়ে, প্রপৌত্রী।
৫১। পিসশাশুড়ি → ফুপুশাশুড়ি।
৫২। পিসশ্বশুর → ফুপাশ্বশুর, স্বামী বা স্ত্রীর ফুপা/পিসে।
৫৩। মাস-শাশুড়ি → খালাশাশুড়ি, শাশুড়ির বোন, স্বামীর/স্ত্রীর খালা।
৫৪। মাস-শ্বশুর → খালুশ্বশুর, শাশুড়ির বোনের জামাই, স্বামীর/স্ত্রীর খালু।
৫৫। দাদাশ্বশুর → শ্বশুর/শাশুড়ির বাবা, স্বামী বা স্ত্রীর পিতামহ বা মাতামহ।
৫৬। দিদিশাশুড়ি → শ্বশুরের বাবা, শ্বশুর বা শাশুড়ির মাতা, দিদিমা-স্থানীয় নারী।
৫৭। ভাইঝি→ ভাইয়ের মেয়ে, ভাতিজি, ভাস্তি (আঞ্চলিক)।
৫৮। ভাইপো→ ভাইয়ের ছেলে, ভাতিজা, ভাইস্তা (আঞ্চলিক)।
৫৯। ভাইবউ/ভাবি/ভ্রাতৃজায়া → ভাইয়ের স্ত্রী।
৬০। জায়া → স্ত্রী, পত্নী।
৬১। বোনঝি → বোনের মেয়ে, ভাগনি।
৬২। বোনপো → বোনের ছেলে, ভাগনা, ভাগনে।
৬৩। বোনাই/ভগিনীপতি/দুলাভাই → ভগিনীর/বোনের স্বামী।
৬৪। পিতামহ/দাদা/ঠাকুরদা/ঠাকুরদাদা → বাবার বাবা
৬৫। পিতামহী/ঠাকুরমা/ঠাকুমা/ঠাম্মা/দাদি/দিদি → বাবার ম।
৬৬। প্রপিতামহ/পর দাদা/বড়ো বাবা→ দাদার বাবা
৬৭। প্রপিতামহী/পর দিদি/বড়ো মা → দাদার মা
৬৮। মাতামহ/দাদু→ মায়ের বাবা/নানা
৬৯। মাতামহী/দিদিমা→ মায়ের মা/নানি
৭০। প্রমাতামহ/পর দাদি → নানার বাবা, মায়ের দাদা
৭১। প্রমাতামহী/পর দাদি→ নানার মা, মায়ের দাদি
৭২। একাধিক ভাই/বোনের ক্ষেত্রে:
1.বড়দা/বড়দি, বড়ো দাদা/বড়ো দিদি, বড়ো ভাই/ বড়ো আপা বা বড়ো বোন→
2.মেজদা/মেজদি; মেজো দাদা/মেজো দিদি, মেজো ভাই/মেজো আপা→
3.সেজদা/সেজপা, সেজো দাদা/ সেজো দিদি, সেজো ভাই/ সেজো আপা; সেজো বোন→
4.ন-দা/ন-দি, নদাদা/নদিদি, নভাই/ন-আপা, নবোন→
5.কনেদা/কনেদি; কনে দাদা/ কনে দিদি, কনে ভাই/ কনে আপা; কনো বোন/ফুলদা/ফুলদিদি; ফুল ভাই/ ফুল আপা→
6.দুয়ো-দা, দুয়ো-দি; দুয়ো-ভাই, দুয়ো আপা →
7.সুয়োদা,সুয়োদি; সুয়ো ভাই/সুয়ো আপা।
প্রস্তুতকরণে: আকাশ হোসেন রায়হান।
তথ্যসূত্র: ১.বাংলা একাডেমি বাংলা অভিধান ২. Nripen Bhaumik ৩. ড. মোহাম্মদ আমিন

পরিবার প্রধানত ৬ প্রকার ৷ যথা :-

• স্বামী-স্ত্রীর সংখ্যার ভিত্তিতে পরিবার ৷ এধরনের পরিবার আবার তিন ভাগে বিভক্ত।যথা-১/একপত্নী পরিবার ২/বহুপত্নী পরিবার ৩/বহুপতি পরিবার।

• কর্তৃত্বের ভিত্তিতে পরিবার ৷ এধরনের পরিবার দুই প্রকার।যথা-১/পিতৃতান্ত্রিক বা পিতৃপ্রধান পরিবার ২/মাতৃতান্ত্রিক বা মাতৃপ্রধান পরিবার।

• আকারের ভিত্তিতে পরিবার ৷ আকারের ভিত্তিতে পরিবার তিন প্রকার।যথা-১/একক পরিবার ২/যৌথ পরিবার ৩/বর্ধিত পরিবার।

• বংশ মর্যাদা ও সম্পত্তির উত্তরাধিকারের ভিত্তিতে পরিবার ৷ এ ধরনের পরিবার দুই প্রকার।যথা-১/পিতৃসূত্রীয় পরিবার ২/মাতৃসূত্রীয় পরিবার।

• বিবাহোত্তর স্বামী -স্ত্রীর বসবাসের ভিত্তিতে পরিবার ৷ এধরনের পরিবার তিন প্রকার।যথা-১/পিতৃবাস পরিবার ২/ মাতৃবাস পরিবার ৩/নয়াবাস পরিবার।

• পাত্র-পাত্রী নির্বাচনের ভিত্তিতে পরিবার ৷ এ ভিত্তিতে পরিবার দু’ধরনের।যথা-১/বহির্গোত্র পরিবার ২/অন্তর্গোত্র পরিবার।

 ○অন্তর্গোত্র পরিবার আবার দু প্রকার।যথা-১/অনুলোম বিবাহভিত্তিক পরিবার ২/প্রতিলোম বিবাহভিত্তিক পরিবার।

 

আত্মীয়তার প্রকারভেদ

আত্মীয় প্রধানত দুই প্রকার। ১. রক্ত সম্পর্কীয় বা বংশীয়। যেমন- বাবা-মা, দাদা-দাদী, ভাই-বোন, মামা-খালা, চাচা, ফুফু প্রমুখ। ২. বিবাহ সম্পর্কীয়। যেমন- শ্বশুর-শাশুড়ি, শ্যালক-শ্যালিকা প্রমুখ।

আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষার হুকুম : আত্মীয়দের ভিন্নতার কারণে আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখার হুকুম ফরজ, সুন্নত ও মানদুব বা বৈধ হয়ে থাকে।

ফরজ : বাবা-মায়ের সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রাখা ফরজ। কেননা আল্লাহ বলেন, ‘আমরা মানুষকে নির্দেশ দিয়েছি তার বাবা-মায়ের প্রতি সদ্ব্যবহার করতে।’ (সুরা আনকাবুত : ৮)

বাবা-মায়ের সঙ্গে সম্পর্ক রক্ষার ব্যাপারে হাদিসে অনেক নির্দেশ এসেছে। যেমন- রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘সে ব্যক্তির নাক ধূলিমলিন হোক, যে ব্যক্তি তার বাবা-মা উভয়কে কিংবা একজনকে বার্ধক্যাবস্থায় পেল এবং সে জান্নাতে প্রবেশ করার সুযোগ লাভ করল না।’ (মুসলিম)

সুন্নাত : অন্যান্য আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে সম্পর্ক রক্ষা করা সুন্নত। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘রেহেম (আত্মীয়তার সম্বন্ধ) আল্লাহর আরশের সঙ্গে ঝুলন্ত রয়েছে। সে বলে, যে ব্যক্তি আমার সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রাখবে, আল্লাহ তার সঙ্গে সম্পর্ক রাখবেন। আর যে আমার সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করবে, আল্লাহ তার সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করবেন।’ (মুসলিম)

বৈধ : অমুসলিম বাবা-মায়ের সঙ্গে সন্তানের সুসম্পর্ক বজায় রাখা বৈধ। যেমন আল্লাহ বলেন- ‘আর যদি তারা তোমাকে আমার সঙ্গে শিরক করতে জোর চেষ্টা করে, যে বিষয়ে তোমার কোনো জ্ঞান নেই, তখন তাদের আনুগত্য করবে না এবং দুনিয়ায় তাদের সঙ্গে বসবাস করবে সদ্ভাবে।’ (সুরা লুকমান : ১৫)

আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষার কিছু পদ্ধতি : আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখার জন্য কিছু কাজ করা জরুরি। সেগুলো হচ্ছে- তাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করা, তাদের অবস্থা সম্পর্কে লক্ষ রাখা এবং তাদের খোঁজখবর নেয়া। তাদের উপহার-উপঢৌকন দেওয়া, তাদের যথাযথ সম্মান করা ও মর্যাদা দেয়া। তাদের মধ্যে যারা দরিদ্র তাদের দান করা। তাদের সুসংবাদে শরিক হওয়া এবং দুঃসংবাদে সহমর্মী ও সমব্যথী হওয়া। এককথায়, সম্পর্কোন্নয়ন ও মজবুতকরণের জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা অব্যাহত রাখা।

ইসলামে আত্মীয়তার গুরুত্ব : আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষা করা অতি জরুরি। এ ব্যাপারে মহান আল্লাহ বলেন- ‘তোমরা ইবাদত করো আল্লাহর, তার সঙ্গে কোনো কিছুকে শরিক করো না। আর সদ্ব্যবহার করো বাবা-মায়ের সঙ্গে, নিকটাত্মীয়ের সঙ্গে, ইয়াতিম, মিসকিন, নিকটাত্মীয়-প্রতিবেশী, অনাত্মীয়-প্রতিবেশী…।’ (সুরা আন-নিসা : ৩৬)

মহান আল্লাহ অন্যত্র বলেন- ‘তোমরা আল্লাহ ছাড়া কারো ইবাদত করবে না এবং সদাচার করবে বাবা-মা, আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে।’ (সুরা বাকারা : ৮৩)
আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন- ‘আমি রাসূলুল্লাহ (সা.) কে বলতে শুনেছি, ‘যে লোক রিজিক প্রশস্ত ও আয়ু বৃদ্ধি করতে চায়, সে যেন তার আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষা করে।’ (বুখারি)

আত্মীয়তার সম্পর্ক ও এর মাহাত্ম্য : আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষা করার প্রয়োজনীয়তা, বিপদাপদে তাদের পাশে দাঁড়ানো, তাদের ভালো-মন্দের খোঁজখবর রাখা এবং তাদের সার্বিক কল্যাণ কামনা করার ফজিলত সম্পর্কে কোরআনুল কারিমে এবং হাদিসে অনেক বাণী উল্লিখিত হয়েছে। মহান আল্লাহ যে সম্পর্ক অটুট রাখার নির্দেশ দিয়েছেন, যারা তা অটুট রাখে তাদের প্রশংসায় তিনি ইরশাদ করেন- ‘আল্লাহ যে সম্পর্ক অক্ষুন্ন রাখার নির্দেশ দিয়েছেন, যারা তা অক্ষুন্ন রাখে, ভয় করে তাদের প্রতিপালককে এবং ভয় করে কঠোর হিসাবকে…এদের জন্য শুভ পরিণাম।’ (সুরা রা’দ : ২১)

আবু সুফিয়ান (রা.) ইসলাম গ্রহণের আগে বাণিজ্য সফরে শ্যাম দেশে গেলে বাদশা হেরাকল তার কাছে রাসূলুল্লাহ (সা.) এর বিবরণ জানতে চান। জবাবে তিনি বলেন- ‘তিনি আমাদের আল্লাহর ইবাদত, সালাত, সত্যবাদিতা, চারিত্রিক শুভ্রতা ও আত্মীয়তার সম্পর্ক বজার রাখার আদেশ করেন।’ (বুখারি)

আত্মীয়তা সম্পর্ক বজায় রাখার ফজিলত : যে কোনো অবস্থায় আত্মীয়তার সম্পর্ক যারা অক্ষুন্ন রাখেন, তাদের সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন- ‘যে ব্যক্তি কামনা করে তার রিজিক প্রশস্ত হোক এবং তার আয়ু দীর্ঘ হোক সে যেন আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখে।’ (বুখারি, মুসলিম)
ইসলাম শুধু স্বধর্মীয় আত্মীয়দের সঙ্গেই সম্পর্ক রক্ষায় উৎসাহিত করেনি, বরং আত্মীয় অমুসলিম হলেও তাদের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখার নির্দেশ দিয়েছে। আসমা বিনতে আবু বকর (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন- ‘রাসূলুল্লাহ (সা.) এর জীবদ্দশায় আমার মা মুশরিক থাকতে একবার আমার কাছে আগমন করেন। আমি রাসূলুল্লাহ (সা.) এর কাছে জিজ্ঞেস করলাম, তিনি আমার সঙ্গে সম্পর্ক রাখতে আগ্রহী, আমি কি আমার মায়ের সঙ্গে সম্পর্ক রাখব? তিনি উত্তর দিলেন, ‘হ্যাঁ, তুমি স্বীয় মায়ের সঙ্গে সম্পর্ক ঠিক রাখো।’ (মুসলিম)

অসুস্থ আত্মীয়কে দেখতে যাওয়া ও সেবা করা : আত্মীয় কেউ অসুস্থ হলে তাকে দেখতে যাওয়া এবং সাধ্যানুযায়ী সেবা করা উচিত। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন- ‘কোনো মুসলিম যখন তার কোনো রুগ্ন মুসলমান ভাইকে দেখতে যায়, তখন সে যেন জান্নাতের বাগানে ফল আহরণ করতে থাকে, যতক্ষণ না সে ফিরে আসে।’ (মুসলিম)

আত্মীয়দের পাশে দাঁড়ানো
আত্মীয়র যেকোনো দুঃখ-শোকে তার পাশে দাঁড়ানো, তার প্রতি সমবেদনা জানানো এবং তাকে সান্তনা দেয়া নেকির কাজ। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন- ‘যে ব্যক্তি তার মুমিন ভাইকে বিপদে সান্তনা দেবে, আল্লাহ কিয়ামতের দিন তাকে সম্মানের পোশাক পরিধান করাবেন।’ (ইবনু মাজাহ)

আমাদের অনেকেই সাধারণ বিষয় নিয়েও ভাইবোন, আত্মীয়স্বজন বা বন্ধু-বান্ধবের সঙ্গে দীর্ঘ দিন কথাবার্তা বন্ধ রাখে। এমনকি অনেকে এভাবে রাগ করে সারা জীবন দেখা-সাক্ষাৎ, কথাবার্তা বন্ধ রাখে। অথচ শরয়ি কারণ ছাড়া আত্মীয়দের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করা যাবে না। এ ব্যাপারে রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন- ‘কোনো মুসলমানের জন্য তিন দিনের বেশি তার ভাইয়ের সঙ্গে কথা বন্ধ রাখা বৈধ নেই।’ (মুসলিম) রাসূলুল্লাহ (সা.) অন্যত্র ইরশাদ করেন- ‘আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্নকারী জান্নাতে প্রবেশ করবে না।’ (মুসলিম)

জানাজায় অংশগ্রহণ : আত্মীয়ের মধ্যে কেউ ইন্তেকাল করলে তার জানাজায় অংশগ্রহণ করা নৈতিক দায়িত্ব। এ প্রসঙ্গে রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন- ‘যে ব্যক্তি ইমানের সঙ্গে ও সওয়াবের আশায় কোনো মুসলমানের জানাজায় আসে এবং তার জানাজার সালাত আদায় ও দাফন সম্পন্ন হওয়া পর্যন্ত সঙ্গে থাকে, সে দুই ক্বিরাত সওয়াব নিয়ে প্রত্যাবর্তন করবে।’ (বুখারি)

শেষ কথা : ইসলাম আত্মীয়ের প্রতি যে অধিকার দিয়েছে তা যথাযথভাবে আদায় করা হলে শান্তিময় সমাজ বিনির্মাণ সম্ভব। সবার উচিত আত্মীয়ের হক আদায় করা।

আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করার পরিণতি : আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্ন করা শুধু একটি মারাত্মক অপরাধই নয়, রবং একটি সামাজিক, মানবিক ও আত্মিক ব্যাধি, যা একটি সুস্থ সমাজ, সুন্দর পরিবেশ ও মানবতাবোধকে হত্যা করে এবং মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাপন, সামাজিক শান্তি-শৃঙ্খলা ও পারস্পরিক ভ্রাতৃত্ববোধকে ব্যাহত করে। ফলে ইসলাম আত্মীয়তার বন্ধনকে অটুট রাখতে সর্বোচ্চ গুরুত্বারোপ করেছে এবং যারা আত্মীয়তার সম্পর্ক নষ্ট করে, তাদের প্রতি কঠোর হুঁশিয়ারি এবং কঠিন আজাব ও শাস্তির কথা ঘোষণা করেছে, তীব্র ভাষায় তাদের ভর্ৎসনা করে মহান আল্লাহ বলেন- ‘যারা আল্লাহর সাথে দৃঢ় অঙ্গীকারে আবদ্ধ হওয়ার পর তা ভঙ্গ করে, যে সম্পর্ক অক্ষুন্ন রাখতে আল্লাহ আদেশ করেছেন, তা ছিন্ন করে এবং পৃথিবীতে আশান্তি সৃষ্টি করে বেড়ায়, তাদের জন্য আছে লানত এবং তাদের জন্য আছে মন্দ আবাস।’ (সুরা রা’দ : ২৫)

 

Law Giant

A lawyer is a 'legal practitioner' who is an advocate, barrister, attorney, solicitor or legal adviser. Lawyers work primarily to solve the legal problems of individuals or organizations through the practical application of theoretical aspects of the law.

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button