Information

Tashfikal Sami Thought

কাউকে মেসেজ লিখে সেন্ড করতে গিয়েও শেষ মুহূর্তে কি ভেবে পুরো লেখাটা মুছে ফেলার যে অনুভূতি..

সেই মানুষটার কাছে আপনার অবস্থানটা কতোখানি আছে বা নেই, আপনার জন্য তার সময় তার আছে কি নেই- এই প্রশ্নের উত্তর না পাওয়ার যে অনুভূতি..

নীরবতার যে বেদনা- তার অনুভূতি থেকে সবাই মুক্তি পাক

—-

কতো রকম সমস্যা নিয়ে কাটে জীবন, মাথার ভেতর নানা রকম দুশ্চিন্তা, প্রতিযোগিতা, ক্যারিয়ার..কতো কী।

 সবকিছুই তুচ্ছ হয়ে যায় যখন কাছের মানুষদের অসুস্থতার কথা শুনি। খুবই অসহায় একটা অনুভূতি। আমরা সুস্থতাকে একদম granted হিসেবে নেই, এটা যে কতো বড় একটা blessing সেটা অসুস্থ না হলে উপলব্ধি করা যায় না।

কোথায় যেন পড়েছিলাম, গল্পটা কতোটুকু সত্য জানি না ঠিক-

মুসা (আঃ) আল্লাহর সাথে কথোপকথনের একপর্যায়ে জানতে চাইলেন, “আমার জায়গায় আপনি থাকলে কোন জিনিসটা চাইতেন সবচেয়ে বেশি করে?”

আল্লাহ বললেন, “সুস্থতা”

সবাই সুস্থ থাকুক, ভাল থাকুক ❤

—–

কিছু মানুষ আছে সবসময় কয়েক বছর পেছানো।

ছোটবেলায় যখন সবাই লুকিয়ে গল্পের বই পড়তো, তাকে পড়তে দেওয়া হতো না এসব “আউট বই”। যখন বই পড়লে শাসনের ভয়টা আর নেই, ততোদিনে গল্পের বইয়ে কল্পনার জগতে বুঁদ হয়ে থাকার স্বর্ণালী সময়টাও জীবন থেকে হারিয়ে গেছে..

যখন সবাই সায়েন্স ফেয়ার, ডিবেট কম্পিটিশনে ধুমায়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে স্কুল-কলেজে, সে তখন “পারমিশন দেবে না” বলে মন খারাপ করে বাসায় বসে আছে। যতদিনে পারমিশনটা মেলে, সে চাইলেই যেতে পারে- ততোদিনে Fest এ ঘুরে বেড়ানোর দিনগুলো শেষ!

যখন ভার্সিটিতে সবাই দলবেঁধে ট্রিপে যাচ্ছে, সে পিছিয়ে আসে “টাকা নাই” বলে। একদিন যখন টাকার সংস্থান হয়- সে অবাক হয়ে দেখে সেই সবাই মিলে সেমেস্টার ফাইনাল দিয়ে ট্রিপে ঘুরতে যাওয়ার স্বপ্নের মতো দিনগুলো কোথায় যেন উধাও হয়ে গেছে!

ভার্সিটি ফার্স্ট ইয়ারে ক্যাম্পাসে সাজসাজ রব- নতুন বন্ধুবান্ধব, নতুন পরিবেশ, নতুন ভালো লাগা- ভালবাসা। সবার মনে উচ্ছ্বাসমাখা আনন্দের ঢেউ। কেউ প্রেমে পড়ছে, কেউ বিরহে কাতর হচ্ছে.. শুধু এরমাঝে তারই আর প্রেমটা করা হয়নি।

যতদিনে প্রেম করার সুযোগটা এলো, ততোদিনে ফার্স্ট ইয়ারের সেই সোনালী চিন্তাহীন দিনগুলো উধাও। মাথার উপর ক্যারিয়ারে ভালো করার প্রেশার; বাবা-মার বয়স হয়েছে, পরিবারের সবার দায়ভার ধীরে ধীরে নিজের উপর আসছে- সারাক্ষণ ছুটতে হচ্ছে জীবনের তাগিদে..

গ্র‍্যাজুয়েট করার পর সে যখন সদ্য চাকরি খুঁজছে, অবাক হয়ে আবিষ্কার করে বন্ধুরা সবাই কবে কখন কিভাবে যেন অনেকদূর এগিয়ে গেছে! ভার্সিটি লাইফেই তাদের কতো কতো “work experience”, এত heavy weight  অভিজ্ঞতার ভিড়ে তার CV টা নিতান্তই সাদামাটা।

সে যখন চাকরি খুঁজে খুঁজে জুতার তলা ক্ষয় করছে ততোদিনে বন্ধুদের একদল স্কলারশিপ নিয়ে বিদেশে পাড়ি জমিয়েছে, আরেকদল ভালো ভালো কর্পোরেট জব দখল করে নিয়েছে। সে তখনও রাস্তায়ই.. হেঁটে বেড়াচ্ছে একটা সুযোগের অপেক্ষায়..

মানুষের জীবনে একটা সময় থাকে- দায়িত্ব নেওয়ার পালা। যে বাবা-মা সবসময় মাথার উপর বটবৃক্ষের ছায়া হয়ে ছিলেন, তারা আজ অসুখে-বয়সে ভারাক্রান্ত। আজ সন্তানের পালা, সব দায়িত্ব ভালবাসা নিয়ে তাদের আগলে রাখার। অনেকেই খুব সুন্দর মতো সব গুছিয়ে নিয়েছে ততোদিনে। অসুস্থতা-অপারেশনের জন্য তাদের সেভিংস আছে, বাবা-মার যত্ন নেওয়ার মতো যথেষ্ট প্রস্তুতি আছে।

কিন্তু কী অবাক ব্যাপার- সেই পিছিয়ে থাকা মানুষটা এখানেও পিছিয়ে! ক্যারিয়ারে একটু থিতু হতে না হতেই জীবনের অনিবার্য পরিণতি- বাবা-মার অসুস্থতা। পারিবারিক নানা সংকট। তার তখনও সামর্থ্য হয়নি এতকিছু সামলে উঠার। একটা সময় সেই অন্তিম মুহূর্ত আসে- বাবা-মাকে হারিয়ে ফেলা, বটবৃক্ষের ছায়াটা মাথা থেকে সরে যাওয়া।

এরা সারাজীবন বুকের ভেতরে একটা কষ্ট ধুকে ধুকে মুষড়ে বেড়ায়- “আমি তো সফল হলাম জীবনে, কিন্তু বাবা-মা যে দেখে যেতে পারলেন না! আজ আমার এতো আছে, কিন্তু তাদের জন্য যে কিছু করতে পারলাম না!”

এই এক জীবন তাদের কেটে যায় কয়েক বছর পিছিয়ে থেকে। অনেক না বলা কথা, অনেক অপূর্ণ শখ, অনেক হারিয়ে যাওয়া স্বপ্ন বুকে চেপে রেখে।

—–

আমরা শুধু সফলদের ঝলমলে সাফল্যের গল্পটাই শুনতে চাই।

একজন সফল মানুষের পেছনে যে আরো শত-হাজার জনের ব্যর্থতার গল্প লুকিয়ে আছে- সেটা আমরা এড়িয়ে যাই। অথচ সত্যিকারের বাস্তবতাটা সেখানেই।

আমরা এমন একটা trend তৈরি করেছি- Social Media তে শুধু কৃতিত্বের গল্পটাই শেয়ার করা নিয়ম। ব্যর্থতার গল্প বলা বারণ। কিন্তু ব্যর্থতাকেও ভালবাসতে জানতে হবে। সেই গল্পগুলো শেয়ার করলে আরো দশজন আপনার ভুলগুলো থেকে শিখতে পারবে।

ব্যর্থতা মানে পরাজয় না। হাল ছেড়ে দেওয়া পরাজয়। ব্যর্থতা একটা শিক্ষা মাত্র- যেটা ভবিষ্যতে আপনাকে আরো শক্তিশালী, আরো ক্ষুরধার করে তুলবে।

অনুপ্রেরণা সাফল্যের গল্প থেকে আসে, কিন্তু জীবনে সত্যিকারের শিক্ষাটা দেয় ব্যর্থতা।

——-

কেউ যখন একটা ভালো খবর সবার আগে আপনার সাথে শেয়ার করে- ব্যাপারটা খুব মন ভালো করে দেয়!

মানুষ তীব্র কোন অনুভূতি একা সইতে পারে না- সুখ-দুঃখের অনুভূতি কারো সাথে শেয়ার করলে তবেই পূর্ণতা আসে।

একটা মানুষ তার সবচেয়ে আনন্দের একটা খবর সবার আগে আপনার সাথেই শেয়ার করছে- বুঝতে হবে আপনি তার খুব প্রিয় একজন মানুষ 💙

——

যারা এগিয়ে থাকে তারা সবাই যে জিনিয়াস ব্যাপারটা এমন না। তারা আমার-আপনার থেকে মাত্র এক ধাপ আগানো।

কিন্তু আপনি সেই ধাপ অতিক্রম করতে করতে তারা পরের ধাপে লাফ মেরে চলে যায়। সবসময় ঐ “এক ধাপ” এর দূরত্বটা থেকেই যায়, হয়তো কখনোই আর ঘুচে না।

—-

মানুষ নিজেকে যখন ভালবাসে, সেই ভালবাসার একটা সীমা থাকে। একটা পর্যায়ে ভালবাসার স্পৃহাটা ফুরিয়ে যায়।

কিন্তু মানুষ যখন অন্যকে ভালবেসে কিছু করে, সেখানে স্পৃহাটা অপরিসীম – সেজন্যই মা সন্তানের জন্য আগুনের মুখে ঝাঁপিয়ে পড়তেও দ্বিধা করেন না।

এই “ভালবাসার স্পৃহা” র শক্তিটা অনেক বড়। আমরা যখন নিজেকে প্রমাণ করতে চাই, একটা লক্ষ্যে পৌঁছাতে চাই, তখন দুরকমের স্পৃহা কাজ করতে পারে। একটা হচ্ছে, “কাউকে দেখিয়ে দেওয়া”, আরেকটা হচ্ছে ” কারো জন্য ভালবাসা”।

এই যে অতীতে কেউ আপনাকে অপমান করেছিল, আপনার স্বপ্নগুলোকে তাচ্ছিল্য করে পা দিয়ে দুমড়েমুচড়ে দিয়েছিল- আপনার খুব রাগ হয়। ইচ্ছে করে “দেখিয়ে দেই তাকে”, ” প্রমাণ করে দিই আমি তাকে হারিয়েছি, তার কথা ভুল প্রমাণ করেছি”।

এই রাগটা কাজে আসে, তবে স্বল্প সময়ের জন্য৷ দিনের পর দিন যখন এই রাগটা পুষে রাখবেন বুকে- তখন ধীরে ধীরে সেখানে একটা ঘা হয়ে যাবে। একটা দগদগে ক্ষত আপনাকে তাড়িয়ে বেড়াবে যন্ত্রণায়। আপনি যন্ত্রণা থেকে কাজের স্পৃহা পাচ্ছেন বটে, কিন্তু তাতে মিশে আছে একরাশ ঘৃণা, যেখানে প্রতি নিঃশ্বাসে ক্রোধের দাবানল।

এই আগুন আপনাকেই কুরে কুরে খাবে, নিঃশেষ করে দেবে।

তাই স্পৃহাটা ক্রোধ থেকে নয়, ভালবাসা থেকেই আসুক। আপনি কাউকে ভালো রাখবেন, আপনার কাছের মানুষগুলোর জন্য একটা সুন্দর জীবন নিশ্চিত করবেন- সেটা ভেবেই কাজের স্পৃহাটুকু খুঁজে নিন।

অতীতের কষ্টগুলো ছাইচাপা দিন, সেই মানুষগুলোকে ক্ষমা করে দিন, মুছে ফেলুন স্মৃতিগুলোকে। It’s not worth it.

ভালবাসা থেকে যে স্পৃহা, তাতে অনেক প্রশান্তি মিশে থাকে। গ্রীষ্মের স্বচ্ছ আকাশে মিটমিট করা তারার মতো, ভালবাসার নক্ষত্র হয়ে জেগে থাকে তারা আপনার মনে আলোর প্রহরী হয়ে 💙

——–

হুট করে একদিন আবিষ্কার করবেন আপনার বন্ধুরা অনেক এগিয়ে গেছে! যাদের সাথে আপনি শুধুই আড্ডা দিতেন, chill করতেন- তারা সবাই কিভাবে কিভাবে যেন অনেকদূর এগিয়ে গেছে। কেউ স্কলারশিপ নিয়ে বিদেশে পাড়ি জমাচ্ছে, কেউ লোভনীয় বেতনে কর্পোরেটে কাজ করছে, কেউ নিজেই ব্যবসা জমিয়ে ফেলেছে।

আপনি এসব দেখে মনে মনে একটু প্রতারিত অনুভব করবেন। মনে মনে ভাববেন, “ও ইংরেজিতে এত fluent কিভাবে হলো? এ এত ভাল প্রোগ্রামিং কখন শিখলো? ওরা যে এতকিছু করে ফেলছে আমি তার কিছুই জানতাম না!”

ব্যাপারটা আসলে দোষারোপের কিছু না। অভিমানেরও কিছু না। ব্যাপারটা বাস্তবতার। সবাই তো সবকিছু আপনার সাথে শেয়ার করবে না, করতে বাধ্যও না কেউ। আপনার সাথে যার যেমন সম্পর্ক- তার শেয়ারের পরিধিও ঐটুকুর মাঝেই সীমাবদ্ধ থাকবে। ধরুন যে GRE দিতে চায়, সে GRE নিয়ে পড়াশোনা করছে এমন বন্ধুর সাথেই বেশি আলোচনা করবে, যে বন্ধু সারাক্ষণ chill করে বেড়ায় তার সাথে না।

তাই বন্ধুত্বে আড্ডা, chill সব থাকবে, কিন্তু সাথে নিজেদের ভবিষ্যতের প্ল্যানিং এও যেন সহায়ক হয়, সবাই সবাইকে লক্ষ্যপূরণে সাপোর্ট দিতে পারে এমন একটা সম্পর্ক দরকার। দিনশেষে সবাই কিন্তু যার যার লক্ষ্যপূরণে ছুটে চলেছে। ফ্রেন্ড সার্কেলের সবাই মিলে চমৎকার একটা সাপোর্টিভ মাইন্ডসেট নিয়ে একসাথে যদি ছুটে চলা যায়- এরচেয়ে সুন্দর আর কী হতে পারে!

———-

জীবনটা হওয়া উচিত খরস্রোতা নদীর মত। তীব্র স্রোতে শুধু এগিয়ে চলা সামনের দিকে। অতীতের জঞ্জাল জমে উঠতে পারবে না, বুকের উপর ভার হয়ে বসতে পারবে না।  স্রোতের তোড়ে ছিটকে ভেসে যাবে।

গন্তব্য শুধুই সামনের। স্বচ্ছ, সুন্দর, স্বপ্নীল। 💙

——-

পৃথিবীতে প্রত্যেকটা কাজই অসম্ভব কঠিন!

—–

পৃথিবীর সবচেয়ে দুঃখের অনুভূতিগুলোর একটা হলো ,

আপনি যা পাওয়ার জন্য জীবনটা দিয়ে দিতে রাজি ছিলেন,

সেটা একদমই deserve না করা কাউকে পেয়ে যেতে দেখা। যেহেতু সে না চাইতেই তা পেয়ে গেছে, তাই তার কদরও করতে জানে নি কখনও।

আপনি যা এত ভালবাসতেন, এত মূল্যায়ন করতেন- তার এহেন পরিণতি দেখে মনের ভেতর দুঃখের পাশাপাশি একটা ক্রোধও জন্মায়। হয়তো খানিকটা করুণাও…

————–

“যা চেয়েছিলাম তা কেন পেলাম না?”

আর “যা চেয়েছিলাম তা পাওয়ার মত যোগ্য করে কেন নিজেকে গড়ে তুললাম না?”

-কথা দুটোর মাঝে অনেক, অনেক পার্থক্য।

প্রথমটা অভিযোগ, দ্বিতীয়টা সংকল্পের।

জীবনের সুন্দর গল্পগুলো শুরু হয় এই সংকল্প থেকেই…

———-

জীবনে যে কোন কাজেই পারদর্শী হওয়াটা খুব কঠিন!

যে মানুষটা সুন্দর গাইতে জানে, সুন্দর কথা বলতে জানে, সুন্দর করে নিজেকে উপস্থাপন করতে জানে- যেই গুণই থাকুক না কেন- আমরা দূর থেকে ধরে নেই, “ও তো ট্যালেন্টেড। ও তো পারবেই..”

একটু গভীরে গেলে উপলব্ধি হয়, এই একেকটা কাজে পারদর্শী হওয়ার জন্য দিনের পর দিন কী অমানুষিক পরিশ্রম করে যেতে হয়। কতটুকু আত্মত্যাগ করতে হয়।

ধরুন, এইযে বাসায় সকালে নাস্তায় রুটি খাই- যখন নিজে রুটি বানাতে গেলাম, রান্নাঘরে গরমে ঘেমে-নেয়ে একাকার। এবড়োখেবড়ো রুটির শেইপ কোনটা বাংলাদেশের মানচিত্র, কোনটা ভুটান!

গোল পাতলা রুটি বানানোর ভেতরেও যে শিল্প আছে সেদিন বুঝলাম!

এইযে দিনের শুরুতে নাস্তার আয়োজন দিয়ে শুরু, এরপর ঘরের বাইরে পা বাড়ান। রোদের উত্তাপ, গনগনে গরম। আপনি রিকশায় চড়ে বসলেন- রিকশাওয়ালা এই সাতসকালেই ঘেমেনেয়ে একাকার। এভাবে ঘণ্টার পর ঘণ্টা সে রিকশা চালিয়ে যাবে। রোদে পুড়ে, পেশি ক্ষয় করে।

আমি গরম সইতে পারি না, রোদে একটু হাঁটলেই দরদর করে ঘামাই। এই গরমে রিকশা চালানোর মত একটা অসম্ভব শারীরিক পরিশ্রমের কাজ করার কথা কল্পনা করলেই মাথা ঝিমঝিম করে উঠে। কিন্তু এই কাজটাই করছে প্রতিদিন দেশে লক্ষ লক্ষ মানুষ।

সারাদিনে এভাবে আপনি চারপাশে তাকিয়ে দেখবেন- মানুষ কত রকমের কাজ করে চলেছে! সেই কাজগুলো সুন্দরভাবে, দক্ষ উপায়ে করাটা কতোটা কঠিন- তা অনুভব করার জন্য হলেও একবার কাজগুলো নিজে করে দেখা প্রয়োজন।

তাহলে জীবনের প্রতি Appreciation আসে।

কৃতজ্ঞতা জন্ম নেয় মনে- You stop taking things for granted.

মানুষের কষ্ট, মানুষের রক্ত পানি করা পরিশ্রম, ঘাম, আত্মত্যাগের মূল্য যখন বুঝবেন তখন আপনা থেকেই মনের ভেতর থেকে অহংকারটা চলে যায়। সবার কাজের প্রতি একটা সম্মান আসে।

এই অনুভূতিটা খুব দরকার জীবনটাকে পরিপূর্ণভাবে উপলব্ধি করার জন্য।

——-

দূঃসময়ের একটা ভালো দিক আছে।

জীবনে সবকিছু যখন সুন্দর যায়- তখন একটা বিপদ ঘটে। এই বিপদ হচ্ছে- আপনার আশেপাশে অনেক “কাছের মানুষ” জুটে যাবে, যারা আসলে কাছের না।

তাই জীবনে মাঝেমধ্যে দুঃসময়ের খুব প্রয়োজন আছে। তখন বোঝা যায় কারা সেই দুঃসময়েও পাশে থাকে,  কারা দূরে সরে যায়, আর কারা আপনার অসহায়ত্বের সুযোগ নিয়ে টেনে মাটিতে নামায় আপনাকে।

দুঃসময়ের এই filtering process টার মাধ্যমে আপনি সেই মুখোশধারী মানুষগুলোকে ছেঁটে ফেলার সুযোগ পাবেন জীবন থেকে। এটার প্রয়োজন আছে।

জীবনে সবকিছুই পরিবর্তনশীল। দুঃসময়ের পর আবার সুসময় আসবেই। সেই সুন্দর সময়টা কাটুক সত্যিকারের সুন্দর মনের মানুষগুলোকে নিয়েই।

———

ধরুন আপনি প্রচণ্ড stressful একটা situation এর ভেতর দিয়ে যাচ্ছেন। চরম দুশ্চিন্তার পর সেই সমস্যাটা অবশেষে সমাধান হলো। বুকের উপর এতক্ষণ জমে থাকা ভারটা নেমে গেছে, মনটা অনেক হাল্কা লাগছে। মানুষ অসম্ভব আনন্দ এবং অসম্ভব যন্ত্রণা- এ দুটোর কোনটাই একা একা সইতে পারে না। কারো না কারো সাথে সে অনুভূতি শেয়ার করতে হয়।

এতক্ষণ এই ভয়ানক strees এর পর মুক্তি মেলার অসম্ভব আনন্দের মুহূর্তটা শেয়ার করার জন্য যে মানুষটার কথা সবার আগে আপনার মাথায় আসবে- বুঝতে হবে সে আপনার জীবনে বিশেষ একজন মানুষ।

আমাদের জীবনে অসম্ভব আনন্দের মুহূর্ত খুব বেশি আসে না। কালেভদ্রে আসে বলেই সেই আনন্দের অনুভূতিটা অনেক বেশি special. আপনি আপনার এই precious মুহূর্তটা সেই মানুষটার সাথে শেয়ার করছেন, আপনার আনন্দের ভাগটা তার সাথেই উপভোগ করছেন- সে মানুষটা পরম ভাগ্যবান/বতী।

———

শেষ বিকেলের রোদ..

দিনের শেষটা নাহয় হাসি মুখেই কাটুক। আমরা যে সময়টা “অন্যের কি কি আছে” “অন্যে কি করেছে” সেটা ভেবে মন খারাপ করি, মাথা ঘামাই- সে সময়টা সবকিছু ভুলে নিজের জন্য কাজ করলে কতো না ভালো হয়!

——-

কাউকে আপনি মন থেকে বিশ্বাস করলেন, শ্রদ্ধা করলেন, আপন ভাবলেন- একদিন সে বিশ্বাসঘাতকতা করে বসলো। আপনার প্রতি চরম তাচ্ছিল্য, অসম্মান প্রদর্শন করলো।

এই অভিজ্ঞতাটা খুব সর্বনাশা। কারণ মানুষটা আপনাকে কষ্ট দিলো শুধু তা নয়, বরং আপনার ভেতরে মানুষকে মন থেকে বিশ্বাস করতে পারার ক্ষমতাটাকেও অনেকখানি ধ্বংস করে দিয়ে গেলো।

জীবনের নিয়মে আপনি আবার হাসবেন, ভালবাসবেন, আপন করে বুকে টানবেন কাউকে। কিন্তু বিশ্বাসটায় কি আগের মত নিঃসন্দেহ, নির্ভাবনা থাকবে? একটু কি সংশয় থাকবে না মিশে?

Losing the innocence of your soul- that hurts more than anything.

—————-

আমাদের সবার জীবনের গল্পগুলো সমান না।

আপনি ঘুরতে গেছেন, মেলায় রং-বেরঙের বেলুনের মিছিল দেখে আপনার মনে আনন্দ জাগে। বেলুন বিক্রি করা ছেলেটা সবার মুখে হাসি ফুটায়, কিন্তু তার নিজের মুখে হাসি ফুটে না। আপনার কাছে এই বেলুন কেনা-না কেনায় কিছু আসে যায় না। ওর কাছে কিন্তু এই সামান্য টাকাটাই সব। এটা দিয়েই হয়তো ওর আজকের খাওয়া-পরা চলবে।

দুজনই কিন্তু মেলায়- আপনি এসেছেন উপভোগে, ছেলেটি এসেছে পেটের দায় জোগাতে। আপনার কাছে এই আনন্দমেলায় সবকিছু উচ্ছ্বাসের, কলরবের। ওর কাছে গল্পটা সংগ্রামের, শোষণের, টিকে থাকার লড়াইয়ের। মেলার রঙের পসরা, বাদ্যের বাজনা তার মন ছুঁয়ে যায় না। মনটা যে বিক্ষিপ্ত অস্তিত্বের সংগ্রামে, আনন্দ করার সুযোগ কই?

হয়তো সেই ছেলেটির একদম পাশাপাশি আপনিও দাঁড়িয়ে আছেন, কিন্তু দুজনের গল্পে যে শত শত মাইল ফারাক…

আপনি চাইলেই মেলা ছেড়ে অন্য কোথাও যেতে পারেন। যেখানে হয়তো আরো বড় আনন্দযজ্ঞ চলছে। আপনার ক্লান্তি, বিরক্তি নিমেষেই দূর করে দিবে উৎসবের আমেজ। ঐ ছেলেটার কিন্তু যাবার জায়গা নেই কোথাও, He doesn’t have any escape. This is his life. ও একটা জালে বন্দী, চাইলেই এই জাল ছিঁড়ে বেরিয়ে যাওয়া সম্ভব না ওর জন্য।

আবার একটু অন্যভাবে চিন্তা করুন। আমি-আপনিও কিন্তু দিনশেষে এই এক সীমাবদ্ধতার জালে বন্দী। হয়তো আমাদের ক্ষেত্রে অস্তিত্বের সংকটটা একটু ভিন্ন ধরণের। নিছক “আজ দুবেলা খাবার জোগানোর জন্য” না, বরং “পরিবারের হাল ধরতে হবে”, “নিজের পায়ে দাঁড়াতে হবে” এমন একটু ভিন্ন ধরণের সংগ্রাম। আমরা এই জালের ভেতরে জড়িয়ে যুদ্ধ করে যাচ্ছি অনবরত এই জাল ছিঁড়ে বেরোনোর জন্য।

অথচ আমার আপনার আশেপাশেই এমন অনেকে আছে যাদের জীবনে এই সীমাবদ্ধতাগুলো একেবারেই অনুপস্থিত। জীবনের প্রাচুর্যের কাছে হার মেনে যায় সীমাবদ্ধতা তাদের গল্পে। আপনাকে যেখানে হোঁচট খেতে হয়, বারবার হিসেব করতে হয় সামর্থ্যে কুলাবে কিনা, সেখানে তারা নির্বিকার চিত্তে হেসেখেলে এগিয়ে যায়। আপনার প্যাশনকে ক্যারিয়ার হিসেবে নিবেন, নাকি অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার লড়াইয়ে নামবেন সীমাবদ্ধতার জাল ছিঁড়ে বেরোনোর স্বপ্ন বাদ দিয়ে- পরিবারের হাল ধরার জন্য এবার ইচ্ছার বিরুদ্ধে হলেও এমন একটা ক্যারিয়ার নিতে হবে যেখানে অর্থ আছে, কিন্তু প্রাণ নেই- আপনি যখন চোখের পানি ফেলে সে হিসাব মেলাতে ব্যস্ত, তখন আপনারই পাশে কেউ অঢেল প্রাচুর্যে গা ভাসাচ্ছে। তার জীবনের হিসাবটা যে আলাদা।

আপনার কিন্তু যাবার জায়গা নেই কোথাও, You don’t have any escape. This is your life. আপনার একটা জালে বন্দী, চাইলেই এই জাল ছিঁড়ে বেরিয়ে যাওয়া সম্ভব না আপনার জন্য।

সবার জীবনের গল্পগুলো সমান না। আর্থিকভাবে দরিদ্র একটা পরিবারে জন্মালে হয়তো নিজের কঠোর পরিশ্রমে সেই দারিদ্র্য থেকে জীবনের একটা পর্যায়ে গিয়ে মুক্তি পাওয়া যায়। কিন্তু নানা জায়গায় তাচ্ছিল্য, অপমান, ব্যর্থতা মোকাবিলা করতে করতে আত্মবিশ্বাস তলানিতে ঠেকে গিয়ে একটা সময় যে মানসিক দারিদ্র্য তৈরি হয়- আত্মবিশ্বাসের দারিদ্র্য- স্বপ্ন দেখতে সাহস হারিয়ে ফেলার দারিদ্র্য- আরেকটাবার এই সীমাবদ্ধতার জাল কেটে নিজের ইচ্ছামত জীবনটা গুছিয়ে নেওয়ার, একটা ফাইট দেওয়ার সাহস না থাকার দারিদ্র্য- সেই দারিদ্র্য হয়তো সারাজীবনই বয়ে বেড়াতে হয়।

“Poverty” is state of financial condition

Being “poor” is a state of mind.

অর্থনৈতিক সংকট মোকাবিলা করা যায়, কিন্তু মনটা একবার পঙ্গু হয়ে গেলে তখন আর কিছু থাকে না জীবনে।

———————————————–

“আলহামদুলিল্লাহ ইফতার Done!”

এই স্ট্যাটাসটা প্রায়ই দেখি সোশাল মিডিয়াতে। এটা নিয়ে হাসাহাসিও কম হয় না। অনেকেই তাচ্ছিল্য করে যেন বলতে চান “তুই ইফতার করেছিস এটা আবার জানানোর কি হয়েছে? কে কেয়ার করে? হেহ!”

আমার মাথায় অন্য একটা ব্যাপার ঘুরে। এই করোনাকালীন কঠিন সময়গুলোতে দেখেছি কাছের মানুষদের আর্থিক টানাপোড়েন। পরিবারের সদস্যদের দুর্ভোগ। আপনজনদের মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়া।

যে ছেলেটা সারাদিন ট্রল পেইজে পড়ে থাকতো, বিভিন্ন সেলেব্রিটিদের পোস্টে তামাশা করতো আজেবাজে মন্তব্য করে, রাত জেগে পাবজি খেলতো – হঠাৎ করে একদিন দেখি সে খুব গম্ভীর।

“কি হয়েছে তোর?”

“বাবার শরীরটা খুব খারাপ। হাসপাতালে ভর্তি করে এলাম। আম্মুর শরীরও ভাল না।”

কথাগুলো বলতে গিয়ে ছেলেটার গলা বুঁজে আসে কান্নায়।

জীবনের বাস্তবতাটা আসলে এমনই। আপনি এখানে খুব নিরাপদ, সুন্দর একটা জীবন কাটাচ্ছেন মনে হচ্ছে। কিন্তু কখন যে জীবন আপনার কলার ধরে ঝাঁকুনি দিয়ে মুখ থুবড়ে মাটিতে এনে ফেলবে বাস্তবতার সংস্পর্শে- তা আমি আপনি কেউ জানি না।

যে মানুষটা দুইদিন আগেও খুব উদ্ধত গলায় কথা বলতো, এখন অসুস্থতায় তার কণ্ঠ দিয়ে শব্দ বের হয় না, কথা বলা দূরের কথা।

কিসের এত judgement? কিসের এত অহংকার? কি জন্য এত নেতিবাচকতা? কি পাবেন এর বিনিময়ে?

কেউ আপনাতেই বিনয়ী হয়, সম্মানের অধিকারী হয়। কাউকে জীবন লাথি দিয়ে মাটিতে ফেলে বিনয়ী হতে শেখায়।

যারা ইফতারের টেবিলে পরিবারের সবাইকে পাশে পাচ্ছেন, একসাথে সবগুলো আপন মানুষ- এই মুহূর্তটার গুরুত্ব অন্তর থেকে উপলব্ধি করতে শিখুন। বিনয় আপনাতেই চলে আসবে। জীবনের প্রতি Appreciation আসবে।

একটাই মাত্র জীবন আমাদের। আনন্দ থাকবে, কষ্টও থাকবে। তার ভেতর আপনার Blessing গুলোকে Count করতে শিখুন। একটা কিছু জীবন থেকে চলে যাওয়ার আগে আমরা তার মূল্য উপলব্ধি করতে শিখি না, এটাই আফসোস।

——————————–

আমরা কেন যেন নিজের পরিচয়ে গর্বিত হতে পারি না। সবসময় অন্যের খুঁটির জোর লাগে। পথেঘাটে যখন আমরা ঝগড়ায় জড়াই, তখন বাঘের মত হুংকার দিয়ে বলি,

“তুই জানিস আমি কে?”

তারপরের লাইনেই আমরা বলি, “আমার চাচা অমুক, মামা তমুক। আমি অমুককে চিনি, তমুকের সাথে আমার দহরম-মহরম।”

কথা ছিল নিজের পরিচয় দেওয়ার। আপনার পরিচিতদের ভেতর কে কে ক্ষমতাবান আছে সবই বললেন, কিন্তু নিজের পরিচয়টাই আর দিলেন না!

বিয়ের কথাই যদি ভাবেন। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে একটা ছেলের নিজের পায়ে দাঁড়াতে দাঁড়াতে বয়স তিরিশ পেরিয়ে যায়। কয়টা ছেলে বিয়ের সময় আর্থিকভাবে স্বচ্ছল স্বাবলম্বী হয়? সংখ্যাটা নগণ্য।

কিন্তু সবাই চায় আর্থিক স্বচ্ছলতা। তাই বিয়ের সময়- “ছেলের পরিবারের এত তলা বাড়ি আছে, গাড়ি আছে” সে হিসেব করতে বসে। ছেলের নিজের কি আছে সে হিসেবটা যেন গৌণ। অথচ বিয়ে তো হচ্ছে ছেলেটার সাথে, ছেলের পরিবারের সাথে না!

ছেলেটি হয়ত আর্থিকভাবে নিজের পায়ে এখনো দাঁড়াতে পারে নি। কিন্তু তার সম্ভাবনা আছে, স্বপ্ন আছে, সে পরিশ্রম করছে, সে একদিন ঠিক সফল হবেই- কিন্তু আমরা সেই “একদিন” এর অপেক্ষায় থাকতে রাজি না। আমাদের এখনই চাই। ছেলে নিজে কিছু না করুক, পরিবার তো ধনী? ওতেই চলবে!

তাই সম্ভাবনাময় ছেলেটা পাত্রের বাজারে মুখ থুবড়ে পড়ে। রেডিমেড সাকসেস চাই।

এখানেও সেই অন্যের খুঁটির জোর। “বাবার টাকা”র জোর।

এই চক্রটা ভেঙে বেরিয়ে আসা খুব কঠিন। যতদিন না আমরা নিজের পরিচয়ে গর্বিত হতে শিখব; কারো অর্জন, তা যত সামান্যই হোক না কেন- সেটাকে সম্মান করতে শিখব; একটা মানুষ কষ্ট করে নিজের মত করে একটা অবস্থানে পৌঁছেছে সেটাকে শ্রদ্ধা করবো- ততোদিন আসলে ব্যাপারটা বদলাবে না।

নিজের পরিশ্রমে কিছু অর্জন করা- খুব জরুরী একটা শিক্ষা জীবনে।

যখন আপনি হাড়ভাঙ্গা পরিশ্রম করে কিছু অর্জন করবেন তখন উপলব্ধি করবেন প্রত্যেকটা কাজের পেছনে কতোখানি শ্রম মিশে থাকে। আপনি অন্যদের পেশাকেও সম্মান করতে শিখবেন। সমাজে আমরা যে যেই পেশাতেই কাজ করি না কেন- সবাই একটা অবদান রেখে যাচ্ছি। হোক সেটা ছোট বা বড়। মানুষের মূল্যায়ন করতে শেখা খুব জরুরি। সেজন্য সবার আগে প্রয়োজন নিজের মূল্যায়ন করতে শেখা।

“আমি অমুককে চিনি” তার ভেতরে সম্মান নেই, সত্যিকারের সম্মান পাবেন যখন বুকে হাত রেখে বলতে পারবেন “আমি আমাকে চিনি”।

——————

সাফল্যের গল্পগুলো শুনতে খুব ভাল্লাগে। অনেক হতাশার মাঝেও যখন শুনি কেউ সাফল্য পেয়েছে- শুনে একটা ভরসা পাই। মনে হয়, “দেখিস, একদিন আমরাও…!”

কিন্তু সত্যি বলতে সাফল্যের চেয়ে বেশি শোনা উচিত ব্যর্থতার গল্প। ব্যর্থতার গল্পগুলো বেশি বাস্তব, বেশি মিলে যায় নিজেদের জীবনের সাথে।

সাফল্যের গল্পগুলো স্বপ্ন দেখায়, আর ব্যর্থতার গল্পগুলো বাস্তবতা শেখায়।

হাজারে সাফল্য পায় একজন। সেই ভাগ্যবান মানুষটির হয়ত আছে অনেক প্রতিভা, অর্থ, রূপ, গুণাবলী।

সেই গুণগুলো সবার থাকবে না এটাই স্বাভাবিক। সবাই স্পেশাল হলে স্পেশালের দাম থাকতো না।

তাই ব্যর্থতার গল্পগুলো জেনে- নিজের হাজারো সীমাবদ্ধতাকে মেনে নিয়ে, তারপরও একটু স্বপ্ন দেখতে জানা, সকালে জানালার ফাঁক দিয়ে আসা একচিলতে মিহি রোদের মত- ওটাই জীবনের সৌন্দর্য। <3

—————–

কোথায় যেন পড়েছিলাম- মানুষ জীবনের একটা বড় অংশ কাটিয়ে দেয় হারিয়ে ফেলা জিনিস খুঁজে খুঁজে।

হারানো সুখের প্রহর, হারানো মানুষ, হারানো সময়..

এই যে আজ শেষবারের মত ইফতার, এই বৃষ্টিভেজা বিষণ্ণ বিকেলে। দেখতে দেখতে রামাদান ফুরিয়ে এলো। একটু মন খারাপ হয়। হারিয়ে গেল মূল্যবান সময়গুলো।

কিন্তু জীবন বহমান..

কাল আবার ইদের আনন্দে নতুন করে সবাই মাতবে। এভাবেই হারানোর মাঝে নতুন প্রাপ্তি আসে।

ইদের শুভেচ্ছা জানাতে গিয়ে খেয়াল করলাম, কতগুলো মানুষ মুছে গেছে এই এক বছরে জীবন থেকে। আমিও প্রতিনিয়ত মুছে যাচ্ছি কত মানুষের স্মৃতি থেকে, তাদের জীবনের অংশ থেকে। একদিন পৃথিবী থেকেও মুছে যাব।

এভাবেই সময় পেরিয়ে যায়, জীবন ফুরিয়ে যায়, পুরোনো-কে মুছে নতুনের আবাহন আসে..

তাই সময়টা, সুযোগটা হারিয়ে যাওয়ার আগেই প্রিয়জনদের বেশি করে ভালবাসায় ঘিরে রাখুন, মুহূর্তগুলো সবাই মিলে উপভোগ করুন পবিত্র বন্ধনে।

সবাইকে ইদ মুবারক ❤️

—————-

এই কথাটা প্রায়ই শুনি, “আমার বাবা-মা আমার প্যাশনটাকে সাপোর্ট করেন না।”

আমরা এই কথাটাও প্রায়ই শুনি, “মানুষ তোমাকে ভয় দেখাবে, কারণ তারা নিজেরা কিছু করতে পারে নাই তাই তাদের ধারণা তুমিও কিছু করতে পারবা না”

এবং তখন আমরা তাদের শত্রু হিসেবে ধরে নিই। আমাদের প্যাশনটাকে সাপোর্ট করে না, মানে সে আমাদের ভালবাসে না!

ব্যাপারটা কিন্তু এত সরল না।

যেই প্যাশন নিয়ে কথা হচ্ছে, আপনার সেই প্যাশনটা কি? গায়ক হবো, খেলোয়াড় হবো, শিল্পী হবো ইত্যাদি..

বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে আপনার কি মনে হয় এই পেশাগুলো খুব নিরাপদ? সারাজীবন পরিবারের জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ উপার্জন করতে পারবেন এই পেশাগুলোয়?

না। এগুলোতে সাফল্যের হার খুবই কম। খুবই, খুবই কম।

আপনি সেটা এখনও জানেন না। আপনার চোখে রঙিন চশমা। তারুণ্যের উচ্ছলতা। “সব ম্যানেজ হয়ে যাবে” অন্ধ বিশ্বাস।

কিন্তু সবকিছু ম্যানেজ হয় না! সব স্বপ্ন পূরণ হয় না। জীবনটা সিনেমার মত না। আপনার বাবা-মা সেটা জানেন। তারা নিজেদের জীবন দিয়ে সেটা উপলব্ধি করেছেন।

সেজন্যই তারা ভয় পান, আপনাকে যেন এই কষ্টের ভেতর দিয়ে যেতে না হয়।

দূরের মানুষগুলো খুব সহজে বলে দিতে পারে, “হ্যা হ্যা! চালিয়ে যাও। বড় তারকা হবে তুমি!” কারণ সত্যি বলতে আপনার সাফল্য-ব্যর্থতা, ভাল থাকা-খারাপ থাকা তে তাদের কিছুই আসে যায় না।

কিন্তু বাবা-মার অনেক কিছু আসে যায়। আপনি প্যাশনের পথে কাজ করতে গিয়ে একটা পর্যায়ে গিয়ে যখন খেই হারিয়ে ফেলবেন, মনে হবে একটা ভুল পথে আগাচ্ছিলেন সবসময়, সব আশা-ভরসা হারিয়ে বেঁচে থাকার আগ্রহ হারিয়ে ফেলবেন- তখন ঐ বাবা-মাই আপনার পাশে থাকবে।

মনে রাখবেন, তারা আপনার শত্রু না। আপনার সবচেয়ে বড় সাপোর্টার। সেজন্যই আপনার প্যাশনটা নিয়ে তারাই প্রশ্ন তুলে- কারণ তারা নিশ্চিত হতে চায় আপনি সত্যিই দৃঢ়সংকল্পবদ্ধ কিনা, আপনি এই প্রতিকূল পথে সফল হওয়ার সামর্থ্য রাখেন কিনা।

মনে রাখবেন, যে সত্যিই আপনার জন্য অন্তর থেকে কেয়ার করে, সেই আপনার সবচেয়ে বড় সমালোচক হবে। কারণ সে মন থেকে চায় আপনি উন্নতি করুন, ভুল শুধরে সামনে এগিয়ে যান।

_____________

“ইগো”- মনের সাথে একটা প্রতারণা।

 ইগোকে মানুষ মনে করে মনের Strength, কিন্তু আসলে এটা একটা অনেক বড় Weakness.

Ego ধরে রাখা মানে হচ্ছে আপনি ব্যাপারটাকে মন থেকে Let go করতে পারছেন না। আপনি সেটা নিয়েই পড়ে আছেন। আপনিই বলুন- এটা কি শক্তিমত্তা, নাকি দুর্বলতা?

শেষ পর্যন্ত ইগো আপনাকে প্রচণ্ডভাবে একা করে দিবে।

সারাজীবন আপনি কাউকে ছাড় দিলেন না। একটা পর্যায়ে এসে আবিষ্কার করবেন জীবনও আপনাকে ছাড় দেয় নি।

_______

একটা মানুষ অনেকগুলো ভালো কাজ করেছে। হঠাৎ একদিন সে একটা ভুল করলো। সাথে সাথে নানারকম মন্তব্য ছুঁড়ে দিল সবাই, “আপনার থেকে এটা আশা করি নি!” “আমি জানতাম এইসব মানুষ এমনই হয়!”

মানুষটা অবাক হয়ে ভাবছে, এই লোকগুলো এতদিন কোথায় ছিল? এই যে এতগুলো দিন সে ভাল কাজ করে এসেছে- কই কখনো তো এই লোকগুলোর থেকে কোন প্রশংসা, উৎসাহ কিছুই মেলে নি!

আজ একটা ভুল হয়েছে আর সবাই এসে হামলে পড়ছে?!

কেউ ভুল করলে, দোষ করলে সমালোচনা হবে অবশ্যই।

সমালোচনার মাধ্যমেই ভুল শুধরে নিতে শেখা হয়।

কিন্তু দীর্ঘদিনের ভালো কাজগুলোর কোন প্রশংসা, কোন মূল্যায়ন না হয়, শুধু যদি সমালোচনার সুযোগ পেলেই এদের দেখা মেলে- তাহলে কিন্তু এই মানুষগুলোর intention নিয়ে আসলেই প্রশ্ন উঠে!

সমালোচনা যেমন করবেন, ভালো কাজগুলোর জন্যও মন খুলে উৎসাহ জানান, প্রশংসা করুন।

_________

তুলনা জিনিসটা সব সুখ কেড়ে নেয় মন থেকে।

তুলনা যদি করতেই হয়- সেটা শুধুই নিজের সাথে। আপনি গতকাল যে অবস্থানে ছিলেন, আজ তার থেকে আরেকটু ভালো করুন। এই তো।

অন্যজন আজ কোন অবস্থানে আছে তা দিয়ে নিজেকে তুলনা করতে যাবেন না।

যার যার জীবন তার তার।

সবার জীবন যার যার মত করে নিজস্ব গতিতে চলে।

——–

মনটা হোক নীল..

-আকাশের মত?

-হ্যা, আকাশের মতই হোক প্রশস্ত। সংকীর্ণতা থাকবে না। উদারতা থাকবে, সবার জন্য আশ্রয় থাকবে।

-নদীর মত?

-হ্যা, নদীর মতই হোক বহমান।

কষ্টগুলো চেপে রাখবে না। সময়ের স্রোতে মুছে যাবে ঘৃণা, গ্লানি। স্রোতের মত এগিয়ে চলবে জীবনের উচ্ছ্বাসে প্রতিনিয়ত।

-বেদনার মত? বেদনার নীল রঙ..

-হ্যা, তাও বলতে পারো! বেদনা কতখানি তীব্র হলে নীল হয়?

জীবনে এই তীব্রতার অনুভূতিটার প্রয়োজন আছে। তীব্রতা তৈরি করে ভালবাসা। আর নিজেকে, ভালবাসতে না পারলে জীবনের ষোল আনাই যে ব্যর্থ..

মনটা হোক নীল। আকাশের মত, বেদনার মত, বহমান স্রোতের মত নীল 💙

——-

জীবনে সাফল্যের পাশাপাশি ব্যর্থতা থাকবেই। কিন্তু সমস্যা বাধে যখন শুধু ব্যর্থতাই আসতে থাকে একের পর এক। আপনি একটা পর্যায়ে গিয়ে আত্মবিশ্বাস পুরোপুরি হারিয়ে ফেলবেন যে আপনার জীবনেও ভালো কিছু ঘটতে পারে।

ভালো সময়ে মনে শক্তি রাখায় কোন কৃতিত্ব নাই। কিন্তু ভেতরে ভেতরে যখন ভেঙেচুরে চুরমার হয়ে যাচ্ছেন- তখন মনের জোরটা ধরে রাখতে জানা, একটা সুন্দর সময়ের প্রতীক্ষায় দাঁতে দাঁত চেপে এগিয়ে যাওয়া- এটাই তো জীবন

——-

আপনি সুখের সন্ধানে সারা পৃথিবী চষে বেড়ালেন, কোথাও খুঁজে পেলেন না।

তারপর একদিন আবিষ্কার করলেন সুখ আসলে আপনার নিজের কাছেই, নিজের অন্তরেই ছিল।

আপনি এতদিন শুধু শুধুই অন্যের attention, care এর উপর নির্ভরশীল হয়ে ছিলেন, নিজের জীবনের সুখের নিয়ন্ত্রণ অন্যের হাতে ছেড়ে দিয়েছিলেন।

_______

আমরা মনের চারপাশের পর্বতের মতো উঁচু শক্ত প্রাচীর তৈরি করে রাখতে চাই, কিন্তু ভেতরে ভেতরে হৃদয়ের রক্তক্ষরণে নদীর মতো ভেঙ্গে যাই।

মনটা মেঘের মতো হলেই ভালো- অভিমান জমতে জমতে যখন বুক ভার হয়ে আসবে, তখন মনের আঙিনা খুলে যাবে। অভিমানগুলো অশ্রু হয়ে নেমে আসবে।

পর্বতের মতো কঠিন হওয়ার চেয়ে মেঘের মতো নরম হলেই বুঝি ভালো

——-

মেঘলা দুপুর, অভিমানী মেঘ, বিষণ্ণ  আকাশ

একাকীত্বের শূন্যতায় মৌনতার অবকাশ

আকাশ ভাঙ্গা বৃষ্টির মাঝে ঘোলাটে কাঁচের দৃষ্টি

মনের মাঝে সুখের বেদনা- কত স্মৃতি, সুখ কল্পনার সৃষ্টি

কী আর হবে গান লিখে, যদি তুমি নাই শোনো

কী আর হবে স্বপ্ন বুনে, যদি তুমি পাশে নাই থাকো

আকাশ ভাঙ্গা অভিমান

সবই ব্যর্থ সবই মিছে

তোমার অভাবে সবই ম্লান

————

সাফল্যের খবরে অভিনন্দন জানানোর মানুষের অভাব হয় না সমাজে, কিন্তু Struggle এর সময়টায় কাউকে পাশে পাওয়া যায় না- অথচ তখনই একটুখানি support এর সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন ছিল!

ঐ খারাপ সময়টায় কাউকে পাশে না পেয়ে একা বাঁচতে শিখে গেছে যে, সুদিন এলে হাজারো শুভাকাঙ্ক্ষীর অভিবাদনও তার মনে এতটুকু প্রভাব ফেলতে পারে না- কারণ সে জানে দিনশেষে ব্যর্থতা আসুক আর সাফল্য আসুক, গল্পটা একান্তই নিজের। কান্নাটাও যেমন একারই ছিল, হাসিটাও একান্তই নিজস্ব।

————–

প্রিয় মানুষ…

মানুষের সাথে মিশতে পারা খুব চমৎকার একটা দক্ষতা। কিন্তু মিশতে পারি বলেই যে মিশতে ভাল লাগবে, সবসময় কিন্তু এমন না। জীবনের প্রয়োজনে, কাজের তাগিদে অগণিত মানুষের সাথে কথা বলতে হয় প্রতিদিন, কিন্তু তারা জানতে পারে কেবল আপনার একটি সামান্য অংশমাত্র। আপনার অন্তরের কথাগুলো খুব অল্প কিছু মানুষের জন্য, যারা কোনরকম judgement, comparison ছাড়াই আপনাকে বুঝতে পারে, বরণ করে নিতে পারে, যাদের সামনে সব সামাজিক “Standard” সবকিছুর মুখোশ খুলে ছুঁড়ে ফেলে একদম নিজের মতো কথা বলা যায় আপন মনে।

কিন্তু এমন কাছের মানুষ হয়তো খুব বিরল, তাই ঘরভর্তি মানুষের ভীড়েও হঠাৎ ভীষণ একাকীত্ব ঘিরে ধরতে পারে, দু’কানে হেডফোন গুঁজে প্রিয় কোন গানে, প্রিয় কোন সুখস্মৃতির পাতায় মুখ লুকিয়ে আশেপাশের জগৎ থেকে অনেক দূরে কোথাও হারিয়ে যাওয়াটাই তাই শ্রেয় মনে হতে পারে।

হয়তো চারপাশের মানুষ আপনাকে চিনে “কম কথা বলা” ছেলেটা/মেয়েটা হিসেবে, তারা হয়তো কখনোই জানবে না প্রিয় মানুষের সাথে পছন্দের বিষয় নিয়ে আপনি কথা বলে যেতে পারেন ঘণ্টার পর ঘণ্টা কোন রকম ক্লান্তি ছাড়া!

এই “প্রিয় মানুষগুলো” খুব চমৎকার, তাইনা? নিজের যতো Insecurities, গ্লানি, ছোট ছোট দুঃখমালা – সবকিছু কি অকপটে শেয়ার করা যায় তাদের সাথে! কি আন্তরিক একটা অনুভূতি, এতো আপন একটা ভালবাসা!

সবার জীবনে এমন কিছু “প্রিয় মানুষ” থাকুক। যাদের আঁকড়ে ধরে চোখের পানিগুলো মুছে একটুখানি হাসা যায় একাকীত্বের অন্ধকার চিরে।

Law Giant

A lawyer is a 'legal practitioner' who is an advocate, barrister, attorney, solicitor or legal adviser. Lawyers work primarily to solve the legal problems of individuals or organizations through the practical application of theoretical aspects of the law.

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button